টঙ্গীতে হা-মীম গ্রুপে রহস্যজনক অসুস্থতা, হাসপাতালে শতাধিক শ্রমিক

টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক © টিডিসি

গাজীপুরের টঙ্গীর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত হা-মীম গ্রুপের কারখানায় আজ শনিবার (২৯ নভেম্বর) লাঞ্চ বিরতির পর হঠাৎই একের পর এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অল্প সময়ের মধ্যেই শতাধিক শ্রমিক অচেতন হওয়া, মাথা ঘোরা, বমি ভাব ও মুখ দিয়ে লালা পড়ার মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। পরিস্থিতি মুহূর্তেই ভয়াবহ রূপ নিলে কারখানায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় এবং শ্রমিকরা একে অপরকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেন।
 
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে একযোগে এত রোগী আসায় তৈরি হয় তীব্র চাপ। পর্যাপ্ত সিটের অভাবে বহু শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবু জরুরি বিভাগে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।
 
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. রোমানা আক্তার বলেন, ‘দুপুরের পর হঠাৎ অসংখ্য শ্রমিককে অচেতন বা অর্ধচেতন অবস্থায় আনা হচ্ছে। কারো মুখ দিয়ে লালা বেরোচ্ছে, কেউ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক একসঙ্গে অসুস্থ হওয়ার কারণ এখনো নির্ণয় করতে পারিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
 
এদিকে কারখানার প্রধান ফটক ও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শ্রমিক, স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। আতঙ্কে খাবারে বিষক্রিয়া, কারখানার ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়া কিংবা কোনো অজানা রাসায়নিকের সংস্পর্শ—এমন বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা ঘুরতে থাকে সবার মুখে, যদিও নিশ্চিতভাবে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
 
শ্রমিকদের অনেকে জানান, লাঞ্চের পর কয়েকজন প্রথমে মাথা ঘোরা অনুভব করেন। পরে তারা একে একে অজ্ঞান হয়ে পড়তে থাকেন এবং খুব দ্রুত অসুস্থ শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেলে কারখানাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। কেউ কারখানা ছেড়ে বের হয়ে যান, কেউ ছুটে যান হাসপাতালে।
 
ঘটনার পরপরই শিল্প পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কারখানা ও হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন।
 
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। শ্রমিকরা কীভাবে অসুস্থ হলো—দুর্ঘটনা, খাদ্যদূষণ বা অন্য কোনো কারণ—সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’
 
প্রশাসনের একাধিক সংস্থা ইতোমধ্যে পানি পরীক্ষা, কারখানার পরিবেশ পরীক্ষা এবং অসুস্থ শ্রমিকদের শারীরিক মূল্যায়ন শুরু করেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে শ্রমিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না।
 
শ্রমিকদের কেউ কেউ এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন, আবার অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। টঙ্গী শিল্পাঞ্চলজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ।