আড়াই ফুটের সেই ‘ফরহাদ–আরিফা’ দম্পতি আজ চরম সংকটে

মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া ও আরিফা আক্তার দম্পতি
মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া ও আরিফা আক্তার দম্পতি © টিডিসি ফটো

সোশ্যাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেই দম্পতি, তিন ফুট উচ্চতার মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া এবং আড়াই ফুট উচ্চতার তার স্ত্রী আরিফা আক্তার – আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুই বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হলেও এরপর থেকে নানা অভাব-অনটনে ভেঙে পড়েছে এই দম্পতির স্বপ্নের সংসার।

ফরহাদ আগে ছোট ব্যাবসা করতেন। পরে অর্থ সংকটে দোকান বন্ধ করে রুপার চেইন সংযোগের কাজ শিখে দিনে একশো–দুইশো টাকা আয় করতেন। তবে সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতা ও অক্ষমতা বাড়ায় সেই কাজটিও আর করতে পারছেন না তিনি। বাজারে কাজের চাহিদা কমে যাওয়ায় সুযোগও নেই বললেই চলে। ফলে সংসার চালানোর মতো কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস তাদের হাতে নেই। 

বছরে সাত হাজার টাকা ভাড়ায় অন্যের জমিতে অস্থায়ী ঘর তুলে বাস করছিলেন ফরহাদ–আরিফা। কিন্তু ফরহাদ কর্মক্ষমতা হারানোয় সেই ভাড়াটুকুও জোগাড় করতে পারছেন না। পরিবারে বড় ভাই না থাকায় আর্থিক সাপোর্টের কেউ নেই। বাবার ভাড়ায় রিকশা চালানোর সামান্য আয়ে কোনোমতে তাদের দিন চলছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য – এই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়, দিনে আনে দিনে খায়। থাকার মতো নিজস্ব ভিটেটুকুও নেই।

আরও পড়ুন : নির্বাচনের আগে দেশে অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিকল্পনা কী?

ফরহাদ ও আরিফা বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। খাওয়া–থাকার খরচ জোটানোই কঠিন হয়ে গেছে। বিয়ের পর এমন জীবন হবে কখনো ভাবিনি।

ফরহাদের মা নারগিস বেগম বলেন, স্বামী রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চলে না। দুই–তিন মাস পরপর যে দুই হাজার বা আড়াই হাজার টাকা ভাতা পাই – তা দিয়ে কিছুই হয় না। অন্য কোনো সরকারি সহযোগিতাও পাই না।

তিনি জানান, ফরহাদ ব্যক্তিগতভাবে কোনো মাসিক ভাতাও পান না।

রামরাইল ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য মুফতিন খানম বলেন, ফরহাদের বিষয়ে আমরা অবগত। তাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। পরিবারটি খুব দুর্বল হওয়ায় আরেকটি ভাতার কার্ড দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে তাৎক্ষণিক সহায়তার কিছু নেই। ভবিষ্যতে ঘর বা অনুদানের প্রকল্প এলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ফরহাদ–আরিফা দম্পতিকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে, একটি স্থায়ী ঘর, নিজস্ব ভিটে, এবং একটি স্থায়ী ভাতা বা আয়ের ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এগুলো নিশ্চিত করা গেলে এই অসহায় পরিবারটির জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে তারা আশা করেন।