আগুনে নিঃস্ব কড়াইল বস্তিবাসী, খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন

বেঁচে থাকার ও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রহর কাটছে কড়াইল বস্তিবাসীর
বেঁচে থাকার ও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রহর কাটছে কড়াইল বস্তিবাসীর © টিডিসি ফটো

রাজধানীর মহাখালির কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়ঙ্কর আগুনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনে তাদের ঘর, মালমাল, স্মৃতি সবই ছাই হয়ে গেছে। এখন তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

পোড়া ঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী রুবিনা, বউ বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি চোখে অঝোর পানি ঝরাতে ঝরাতে বললেন, ‘এখানে আমার ঘর ছিল। আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন কোথায় যাব? মাথা গোজার ঠাঁই নেই আমার।’

শুধু রুবিনা নন, অসংখ্য মানুষ এখন আশ্রয়হীন। হারিয়েছেন ঘর, হারিয়েছেন জীবিকার সরঞ্জাম। তাদের সামনে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। বেঁচে থাকার ও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রহর কাটছে তাদের।

রুবিনা বলেন, ‘সেদিন (মঙ্গলবার) ৫ টার দিকে শুনলাম আগুন লাগছে। বাড়িতে তখন ৪ জন নারী ছাড়া কেউ ছিল না। আমার তিন পোলা তখন কাজে গিয়েছিল। আমরা ৩০ বছর আগে ময়মনসিংহ থেকে এখানে এসেছিলাম। দুপোলা অটো চালায়, ছেলে-বউ বাসাবাড়িতে কাজ করে। অনেক কষ্টে টিন ও কাঠের ঘর বানিয়েছি। এবার কী হবে আমাদের? কোথায় থাকব আমরা? কে দেবে এই অর্থের জোগান?’

তিনি জানান, বস্তিতে আগের দুইবারও আগুনে পুড়েছিল। এবারও তার ঘর, খাট, আলমারি, ফ্রিজ—সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে রুবিনার চোখে শুধু হাহাকার, আশাহীনতা আর হতাশা। আশেপাশে কেউ পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র টোকাচ্ছেন, কেউ কান্নায় আহাজারি করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের পর কড়াইল বস্তিতে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি। তারা জানান, আগুনের পর থেকে খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ তেমনভাবে হচ্ছে না।

বস্তির আরেক বাসিন্দা রহিমা বলেন, ‘মিন্টুর বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত। টিনের দুইতলা ঘরের নিচতলায় আমরা দীর্ঘদিন থেকে পরিবার নিয়ে থাকতাম। ঘরে সবাই নারী ছিল, তাই আগুনের সময় কিছুই করতে পারিনি। মুহূর্তে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কাপড়, বেড, আলমারি, বাচ্চাদের বইপত্র—সবই পুড়ে ছাই। টিনগুলো আগুনের তাপে কুঁচকে গেছে।’

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, এতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তবে ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কড়াইল বস্তির একাংশ। যার ফলে বাসিন্দারা রাত কাটাতে বাধ্য হন খোলা আকাশের নিচে।

মহাখালী কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রায় ১৫০০ ঘর-বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।