কর্মচারী নেতার মন্তব্য
‘পে স্কেলের দাবিতে সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারও মাঠে নামতে প্রস্তুত’
- টিডিসি রিপোর্ট
- ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৭
নতুন সরকারি বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে সভা করেছে জাতীয় বেতন কমিশন। এতে সচিবদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই কমিশন রিপোর্ট জমা দেবে। তবে এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে সরকারি কর্মচারী নেতারা। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা বলছেন, পে স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে এবার শুধু কর্মচারীরা নয়, তাদের পরিবারের সদস্যরাও মাঠে নামবেন।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র আবদুল মালেক মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা অতীতেও মহাসমাবেশ করেছি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি একবার শহীদ মিনারে আমরা মহাসমাবেশ করেছিলাম, কিন্তু তখন আসলে যে সাড়াটা পাওয়ার কথা ছিল, সে অনুযায়ী কর্মচারীরা উপস্থিত হয়নি। কিন্তু এবারে একটা আশার দিক আছে যে, যেহেতু একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে রকম অবস্থা, ঠিক সেটাই হয়েছে। সামনের আর সময় নেই। এই জায়গা থেকে যদি সবাই আসে। তবে আমরা অবশ্যই মহাসমাবেশ করলে সেটা শান্তিপূর্ণ হবে, অহিংস হবে। এখানে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয়, রাষ্ট্রের যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয় বা জনসাধারণের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকটা অবশ্যই খেয়াল থাকবে এবং দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে, সেটাও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নতুন পে স্কেলের দাবিতে ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ
আবদুল মালেক বলেন, দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে একটা মতভেদ সবসময়ই ছিল। এখনো যে নেই তা নয়। কিন্তু আমার মনে হয় এই দাবির ক্ষেত্রে যত পেশাজীবী সংগঠন আছে, তারা যদি সবাই হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার যা কিছু আছে সবকিছু ভুলে একই প্ল্যাটফর্মে আসে, তাহলে শুধু ঢাকার কর্মচারীরাও যদি শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থিত হয়, তাও কিন্তু রাস্তায় দাঁড়াবার মত জায়গা থাকবে না। কিন্তু সে জায়গা থেকে সবাই এখানে আসে না। তাদের মধ্যে একটা ধারণা হচ্ছে সরকারি সার্কুলার হলে বা বিজ্ঞপ্তি হলে, পে স্কেল দিলে আপনিও পাবেন আমিও পাব। এই একটা জায়গা থেকে সবাই কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে আসে না। দেখা যায় অনেক দূর থেকে দুই-তিন হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় আসে। আর আরেকজন ঢাকা থেকে ২০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে ওখানে যেতে তারা অনীহা প্রকাশ করে। এই কারণেই দেখা যায় আমাদের এই দাবিগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আসলে আগাতে পারি না। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সরকারকে কি দায়ী করব? দেখা গেছে, আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে দায়ী করে বসে আছি। কারণ আমরা সরকারকে যে দেখাব, সরকারকে আমাদের যে অভাব- সেটা তো বোঝাতে পারছি না। আর যদি কর্মচারীরা সত্যি কষ্টে থাকে, তাহলে সে তো অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, কর্মচারীদের পরিবারেরাও এই পে স্কেল বাবাস্তবায়নের জন্য মাঠে আসতে প্রস্তুত।
লোক সমাগমের বিষয়ে তিনি বলেন, আশা কম করে হয় না। আশা তো করি বড়টাই। এখন উপস্থিতি কত হতে পারে, কি রকম হতে পারে সেটা আসলে এক্সাক্টলি বলা যায় না। অনেক বেশি হতে পারে, কমও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৩০ নভেম্বর থেকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট-ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি, ৪ ডিসেম্বর কমপ্লিট শাটডাউন
মহাসমাবেশ থেকে কি ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে জানতে চাইলে এই কর্মচারী নেতা বলেন, সেটা কেন্দ্রীয় নেতারা যারা আছেন, উনারা আলোচনা করেই হয়তো সিদ্ধান্ত নিবেন। এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এখন যে কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে, জেলা-উপজেলায় যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে এবং জেলায় ডিসির মাধ্যমে ও উপজেলায় ইউএনওর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে পে স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য একটা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়- এরকম কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন সরকারি কর্মচারীরা। পূর্বঘোষিত ৭ দফার ভিত্তিতে নবম পে স্কেলের এক দফা দাবিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পে কমিশন কর্তৃক স্কেলের রিপোর্ট প্রদানের দাবিতে গত ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সব উপজেলায় নিজ নিজ অফিসে কর্মচারী বিক্ষোভ করেন তারা। আজ ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সব জেলা, অধিদপ্তর/দপ্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন কর্মচারীরা। এরপরেও দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৯ ঘটিকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মচারী মহাসমাবেশ করা হবে। পরবর্তী কর্মসূচি মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে।