কড়াইল বস্তির আগুন নিভল ১৬ ঘণ্টা পর, ভস্মীভূত ১৫০০ ঘরবাড়ি

 কড়াইল বস্তিতে আগুন
কড়াইল বস্তিতে আগুন © সংগৃহীত

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টায় প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর কড়াইল বস্তির আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রাজধানীর মহাখালিতে অবস্থিত এই বস্তির আগুনে কেউ মারা না গেলেও প্রায় ১ হাজার ৫০০ ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। আজ বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তর থেকে খুদে বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কড়াইল বস্তিতে আনুমানিক দেড় হাজার ঘরবাড়ি পুড়েছে এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স) লেটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৫০০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর জানা যাবে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার ৩৫ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রথম তিনটি ইউনিট। এর প্রধান কারণ ছিল ঢাকা শহরের তীব্র যানজট। বিকেলের দিকে যানজট বেশি থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো দ্রুত মুভ করতে পারেনি।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরু রাস্তার কারণে বড় গাড়িগুলো বস্তির ভেতরে ঢুকতে পারেনি। ফলে দূর থেকে পাইপ টেনে কাজ করতে হয়েছে। এর আগেই আগুন ‘ডেভলপ স্টেজে’ চলে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লাগে। ফায়ার ফাইটাররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দ্রুত আগুন আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আগুন নেভানোর কাজ করার সময় দেখা গেছে, বস্তিতে যত্রতত্র বিদ্যুতের তার রয়েছে এবং প্রত্যেক বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। আগুনের উৎস তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।’

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর নেই, তবে ছোটখাটো আহত কেউ হতে পারে, যা পরে জানা যাবে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য এবং সামগ্রিক পরিমাণও তদন্তের পরই নির্ধারণ করা হবে।

কড়াইল বস্তিতে প্রায় প্রতি বছর আগুন লাগার প্রবণতা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছরই এখানে মহড়া করা হয়। ‘মহড়ায় দুর্বল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং আগুন লাগলে সে অনুযায়ী কাজ করা হয়। কিছুদিন আগেই মহড়া শেষ হয়েছিল, এজন্য আগুন দ্রুত নেভানো গেছে; অন্যথায় আগুন নেভাতে হয়তো আরও দুই-তিন ঘণ্টা বেশি সময় লাগতো।’

তিনি আরও সতর্ক করে দেন, সামনে শীত আসছে এবং এই সময়টিকে ফায়ার সার্ভিস ‘আগুনের সিজন’ বলে চিহ্নিত করা হয়। অন্য সিজনের চেয়ে এই সময়ে আগুনের ঘটনা বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

পানি স্বল্পতা নিয়ে স্থানীয়দের দাবির জবাবে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পানির সাপোর্ট পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব পানিবাহী গাড়ি, ওয়াসা এবং ড্রেন থেকেও পানি নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল বিকেল ৫টা ২২ মিনিটের দিকে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে ১১টি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরে আরও ৮টি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।