কেউ প্রাণীর সাথে, কেউবা নগ্ন হয়ে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুমের স্টাইল

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি © সংগৃহীত

ঘুম‌‌‌ এমন একটি প্রয়োজনীয়তা, যা পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যেই সাধারণ। কিন্তু ঘুমানোর ধরন, রীতি আর পরিবেশ? সেটি কিন্তু দেশ কিংবা সংস্কৃতিভেদে বদলে যায় ব্যাপকভাবে। পৃথিবীর নানা স্থানে এমন কিছু অদ্ভুত ও মজার ঘুমের রীতি আছে, যেগুলো সত্যিই কৌতূহলোদ্দীপক। কোনো দেশে দুপুরে খানিক বিশ্রাম খুব স্বাভাবিক, কোথাও আবার শিশুকে তীব্র শীতে বাইরে রেখে ঘুম পাড়ানোও নিয়মিত ব্যাপার। চলুন দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের অদ্ভুত হলেও আকর্ষণীয় কিছু ঘুমের অভ্যাস—

সিয়েস্তা
এটি স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশের মানুষের বা সংস্কৃতিতে দেখা যায়। এটি মূলত দুপুরের ঘুম। সিয়েস্তার ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরোনো। ধারণা করা হয়, গরম আবহাওয়ায় কৃষকদের বিশ্রাম ও শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এটি চালু হয়েছিল। এখন স্পেন, ইতালি ও আরও কিছু ইউরোপীয় দেশে দুপুরের এই বিরতিতে বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আরাম করে খাওয়া-দাওয়া ও একটু ঘুমানো বেশ স্বাভাবিক বিষয়। দুপুরের সময় শরীর স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ক্লান্ত হয়, তাই অনেক ঘুম বিশেষজ্ঞ অন্য দেশেও এই অভ্যাসকে উৎসাহিত করেন।

নগ্ন হয়ে ঘুমানো
যুক্তরাজ্যে নগ্ন হয়ে ঘুমানোর প্রবণতা বেশ বেশি। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ নাগরিক বেশিরভাগ রাতেই কোনো পোশাক ছাড়া ঘুমান, যা অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

প্রাণীদের সঙ্গে ঘুমানো
যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষই তাদের পোষা প্রাণীর সঙ্গে ঘুমান। ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, তিন ভাগের বেশি আমেরিকান অন্তত একটি পোষা প্রাণী রাখেন, এবং তাদের ৭১ শতাংশ অন্তত মাঝে-মধ্যে তাদের প্রাণীকে একই বিছানায় ঘুমাতে দেন। এতে কিছু মানুষের ঘুম ব্যাহত হতে পারে, তবে মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা বলছে বেশিরভাগ মানুষই জানান, পোষা প্রাণীর উপস্থিতিতে উষ্ণতা, সুখ এবং আরাম পাওয়া যায়।

খোলা হাওয়ায় শিশুর ঘুম
নরওয়ে, সুইডেনসহ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে শিশুদের বাইরে রেখে ঘুম পাড়ানো খুব সাধারণ একটি ব্যাপার, এমনকি কনকনে শীতেও। দোকান, রেস্তোরাঁ কিংবা অন্য কোথাও বাবা-মা কাজ করার সময় শিশুদের স্ট্রোলারসহ বাইরে ঘুমাতে দেখা যায়। বাবা-মায়েদের বিশ্বাস, খোলা বাতাস শিশুদের জন্য ভালো এবং এতে তারা কম অসুস্থ হয়। স্থানীয় ডে-কেয়ার ও প্রি-স্কুলগুলোতেও বাইরে ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকে।

জনসম্মুখে ঘুম
জাপানে ইনেমুরি নামে পরিচিত জনসম্মুখে হালকা ঘুমানোর একটি রীতি আছে। পার্কের বেঞ্চে, ট্রেনে, কোনো ডিনার পার্টিতে বা এমনকি অফিস মিটিংয়েও মানুষকে ঘুমাতে দেখা যায়। পরিশ্রম ও দায়িত্ববোধকে গুরুত্ব দেওয়া জাপানি সংস্কৃতিতে ইনেমুরিকে দেখা হয় কঠোর পরিশ্রমের পরও অংশগ্রহণের এক নিদর্শন হিসেবে।

ঘুমানোর আগে প্রার্থনা
মেক্সিকোতে ঘুমানোর আগে ধ্যান বা প্রার্থনা করা খুবই সাধারণ বিষয়। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক জরিপে ৬২ শতাংশ মেক্সিকান জানিয়েছেন, তারা ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে প্রার্থনা বা ধ্যান করেন। টিভি বা মোবাইলের মতো নয়, প্রার্থনা বা ধ্যানের নীরবতা ও প্রশান্তি সহজেই ঘুম আনতে সাহায্য করে।

কম চাদর ব্যবহার
অনেক ইউরোপীয় বাসিন্দা টপ শিট ব্যবহার করেন না। তারা শুধু একটি ফিটেড শিটের ওপর শুয়ে তার ওপরে কমফোর্টার বা ডুভে ব্যবহার করেন। ডুভের নিজস্ব কাভার থাকে, যা সহজেই খুলে ধোয়া যায়। এটি গরমকালে অতিরিক্ত চাদরের ঝামেলা কমায় এবং শীতকালে যথেষ্ট উষ্ণতাও দেয়।

শিশুদের দেরিতে ঘুমানো
যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মায়েরা সাধারণত শিশুদের দ্রুত ঘুম পাড়ান যাতে নিজেরা কিছুটা কাটাতে পারেন। কিন্তু আর্জেন্টিনায় বাচ্চারা রাতের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়াই স্বাভাবিক। সেখানে রাত ৯টার আগে রাতের খাবার শুরুই হয় না। তাই বাচ্চারা প্রায়ই রাত ১০টা পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি সময় জেগে থাকে, উৎসব বা ছুটির দিনে আরও দেরি পর্যন্ত। 

চিন্তা দূর করার পুতুল
গুয়েতমালার পাহাড়ি অঞ্চলের আদিবাসীরা তৈরি করেন 'ওয়ারি ডল' বা চিন্তামুক্তির পুতুল। কাঠ বা তার দিয়ে তৈরি এই ছোট পুতুলগুলো রঙিন সুতা ও ঐতিহ্যবাহী মায়ান পোশাক দিয়ে সাজানো হয়। মায়া লোককথা অনুযায়ী, রাতে ঘুমাতে না পারার মতো কোনো দুশ্চিন্তা থাকলে যত পুতুল প্রয়োজন তাতে সব চিন্তা বলে দিতে হয়। তারপর পুতুলগুলো বালিশের নিচে রেখে দিলে তারা নাকি সব দুশ্চিন্তা নিজেরা বহন করে নেয়, আর মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে।

ঘুমের রীতি যেমন আলাদা, তেমনি সেগুলোর পেছনের গল্পও একেক দেশে একেক রকম। মানুষ যেভাবেই ঘুমাক না কেন লক্ষ্য একটাই; কিছুটা বিশ্রাম, কিছুটা শান্তি আর নতুন দিনের শক্তি ফিরে পাওয়া।