দেশনেত্রীর উপস্থিতিই এই দেশের মানুষের জন্য অদম্য শক্তি

মাহবুব নাহিদ
মাহবুব নাহিদ © টিডিসি সম্পাদিত

লৌহমানবী হয়ে মার্গারেট থ্যাচার কিংবা মানবতার প্রতীক মাদার তেরেসার গল্প যেমন: সারা পৃথিবীর মানুষ চেনে, তেমনি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে চির অমলিন এক নাম, বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অবিরাম সংগ্রাম আজ শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, অনুপ্রেরণার আলো, এগিয়ে যাওয়ার রসদ। গত বছরের মতো এবারও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি যেন পুরো দৃশ্যপটকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল এক অদ্ভুত দীপ্তিতে। এক ঝলকে মনে করিয়ে দিলেন সেই আলোকবর্তিকার কথা, যাঁরা সময়কে ছাড়িয়ে মানুষের আশা হয়ে ওঠেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন”—এই ধ্রুব সত্য যেন তাঁর জীবনযাত্রায় প্রতিটি মুহূর্তে আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশিত হয়।

যারা ভেবেছিলো তাঁকে নিঃশেষ করে ফেলা যাবে, যারা চেয়েছিল তাঁকে ইতিহাসের অন্ধকারে ঠেলে দিতে, তারা জানতো না যে তাঁকে করার প্রতিটি আঘাত, প্রতিটি অবমাননা একদিন ফুল হয়ে ফুটবে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের এক প্রতীক, গণতন্ত্রের দীর্ঘ যাত্রাপথে এক অটল উপস্থিতি, তিনি মা মাটি ও মানুষের নেত্রী। তাই তাঁকে ভুলে যাওয়া এত সহজ নয়, তিনি জায়গা করে নিয়েছেন আমাদের বুক পকেটে, মন পকেটে, হৃদয়ের গভীরে, অন্তরের অন্তঃস্থলে। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সাথে যে নামটি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে, তিনি হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যা অনিঃশেষ আলো, অবিরাম পথচলা এবং অমর প্রেরণার একটি নাম।

গতকাল সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে একটা বিষয় অনেকেই খেয়াল করেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন হাত নেড়ে সালামেরর উত্তর দিচ্ছিলেন তখন তাঁর হাতের দিকে সবার নজর পড়েছে, তাঁর হাতের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় যে তিনি চিকিৎসার যে ন্যূনতম মৌলিক অধিকার সেটুকু তিনি পাননি। শত শত বছরের পুরাতন একটি জরাজীর্ণ ভবনে একাকী তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁর অপরাধ কিছুই ছিল না, মাত্র বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কাজ করার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করার জন্য, দেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁকে নানা প্রলোভন দেখানো হয়েছে, নানা ভয় দেখানো হয়েছে, কিন্তু কোনো ভয় কিংবা কোনো প্রলোভন তাঁকে ভাঙতে পারেনি; আপোশহীনতার অবিচল সংগ্রাম তিনি অবিরতভাবে চালিয়ে গেছে। মিথ্যা মামলায় তাঁকে বন্দী করে রাখলেও, তাঁর অনবদ্য সংগ্রামকে দমিয়ে রাখা যায়নি। তাঁর উপরে চালানো নির্যাতন বরং স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠেছে, মুক্তির সংগ্রামে মানুষ নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে। 

২০২৪ সালের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান। তাঁর মুক্তিই ছিল বাংলাদেশের মুক্তি। কিন্তু তাঁর উপরে ঘটে যাওয়ার সীমাহীন নির্যাতনের পরেও তিনি পরিবর্তিত বাংলাদেশে তাঁর প্রজ্ঞা, সহিষ্ণুতার রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে কয়বার কথা বলার জন্য সামনে এসেছেন, প্রত্যেকবারই তিনি প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, কোনো ধরনের বিষোদ্‌গারের উপসর্গ তাঁর কথাবার্তায় দেখা যায়নি, তিনি কথা বলেছেন দেশের মানুষের পক্ষে, এত নির্যাতন তাঁর উপরে হয়েছে, তবুও বিন্দুমাত্র রাগ ক্ষোভ তিনি দেখাননি। তিনি চলেছেন তাঁর নিজের পথেই, যে পথে তিনি অবিরাম চলেছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সংসদ নির্বাচনে না হারার রেকর্ড তো আছেই, এই দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়া পরিবার ও বিএনপির দায় আছে গণমানুষের কাছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে শেখ মুজিব যখন দেশটাকে জীবন্ত জেলখানায় রুপান্তর করে, তখন সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের দায়িত্ব নেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কিন্তু এই ক্ষণজন্মা পুরুষকে দেশের শত্রুরা বেশি সময় কাজ করতে দেয়নি। দেশ আবার পড়ে যায় ঘন কালো আঁধারে। সেই নিকোশ কালো আঁধারের বুক থেকে সন্ধাতারা হয়ে বাংলাদেশের আকাশকে আলোকিত করেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গৃহবধূ থেকে রাজপথে নেমে এসে হয়ে ওঠেন দেশনেত্রী, তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধার দেখে বিরোধী শিবিরের লোকেরাও মেনে নেয় তাঁর নেতৃত্ব। তাঁর নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয় সব মত পথের মানুষ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর সেই অবিচল সংগ্রাম নিঃসন্দেহে আমাদের বহুকাল ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট থেকে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়, গণতন্ত্রের দ্বার যায় খুলে। সেই অবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ খুঁজে নেয় তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে। 

বহুকাল সংগ্রাম চালিয়ে মাথা বিন্দুমাত্র না নুইয়ে এগিয়ে যাওয়ার অবিকল্প নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। আজকের এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও দেশের মানুষ খুঁজে ফেরে দেশনেত্রীর নেতৃত্ব। এই দেশের মানুষের মাঝে তাঁর উপস্থিতিই যেন অদম্য শক্তি।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক