জমকালো আয়োজনে চুয়েটে ‘টেলিভার্স ১.০’ অনুষ্ঠিত

টেলিভার্স ১.০ আয়োজনে সরব হয়ে ওঠে পুরো চুয়েট ক্যাম্পাস
টেলিভার্স ১.০ আয়োজনে সরব হয়ে ওঠে পুরো চুয়েট ক্যাম্পাস © টিডিসি

প্রযুক্তিগত দিকের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ও মনোজ্ঞ সব আয়োজনের যুগলবন্দীর মধ্য দিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) জাতীয় উৎসব ‘টেলিভার্স ১.০’। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত হয় ৪ দিনব্যাপী ভিন্নধর্মী এই উৎসবটি। ৪টি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা, ১টি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তিগত সেমিনার ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে সরব হয়ে ওঠে পুরো চুয়েট ক্যাম্পাস।

জাঁকজমকপূর্ণ এ উৎসবটি শুরু হয় গত ২০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টায় ফ্ল্যাশমবের (নৃত্যানুষ্ঠান) মাধ্যমে। এরপর শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত হয় ‘আইওট্রিক্স অ্যান্ড এপিআই এভেঞ্জারস’ নামক ২টি হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা। সেখানে শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সমাধান করেন এবং সেই সমাধান কীভাবে ব্যবসায়ে রূপান্তর করা যায় ও বিনিয়োগের জন্য এর উপযোগিতা তুলে ধরেন। দেশের প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১৯ জন শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়।

উৎসবের তৃতীয় দিনে আয়োজিত হয় ‘এআই ফিকেশন’ নামক আরও এক প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিযোগিতা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করাই লক্ষ্য ছিল এই প্রতিযোগিতার। এর চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা মোট ১৪টি দল অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া একই দিনে ‘টকবাইট’ নামক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের স্বনামধন্য ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর অনন্য জামানসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদ অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।

সবশেষে আজ, ২৩ নভেম্বর (রবিবার) চার দিনব্যাপী এ উৎসবের ইতি টানা হয়। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালির মাধ্যমে দিনের সূচনা ঘটে। এরপর ১২টায় আয়োজিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে চার দিনের এই উৎসবের।

ওই উৎসবে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে আগত প্রতিযোগী জান্নাতুল ফেরদৌস আয়োজন সম্পর্কে বলেন, ‘এর আগে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়ে এখানে মূল পর্বে এসেছি। হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বিত একটি সমস্যা দেওয়া হয়েছে, যেটি আমরা সমাধান করছি। চুয়েট ক্যাম্পাসে এসে বেশ ভালো লাগছে। ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তারা সবাই খুব আন্তরিক। এমন আয়োজন সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে।’

এআই ফিকেশনে অংশগ্রহণকারী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আনিকা বুশরা বলেন, ‘এটা আমার অংশগ্রহণ করা প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতা, সে হিসেবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের সবকিছু বেশ গোছানো ছিল। তাদের ব্যবস্থাপনা, আচরণ প্রশংসনীয় ছিল।’

আয়োজকদের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদ ফুয়াদ খান বলেন, ‘চুয়েটের ইটিই বিভাগের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট ‘টেলিভার্স ১.০’-এর অংশ হিসেবে মোট ৪টি জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা দিনভর এগুলোতে বেশ উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। তারা আমাদের আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এটিই আমাদের মূল পাওয়া। এই আয়োজনের পেছনে যাদের অবদান, তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া এ আয়োজন সম্পর্কে বলেন, ‘চুয়েটের ইটিই বিভাগের এই ধরণের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, গবেষণা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতাকে সমৃদ্ধ করে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির নেতৃত্ব হিসেবে তৈরি করতে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

উল্লেখ্য, এই উৎসবে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত ৪টি প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তার মধ্যে আইওট্রিক্স প্রতিযোগিতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দল টিম আলফা, এপিআই এভেঞ্জারস প্রতিযোগিতায় বুয়েটের দল ফ্যাট-৩২, এআই ফিকেশন প্রতিযোগিতায় ঢাবি ও বুয়েটের সম্মিলিত দল স্লথস এবং স্টেলথ ফ্ল্যাগস প্রতিযোগিতায় ইবি, এআইইউবি ও ডিআইইউর দল ব্লাইন্ড ভাইরাস বিজয়ী হয়। এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য ছিল প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা সমমূল্যের পুরস্কার। এই সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির মূল পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিইপিসিএল)।