প্রকৃতির দান কাশগাছ, চরবাসীর আয়ের বড় উৎস

কাশগাছ সংগ্রহ করছেন স্থানীয় লোকজন
কাশগাছ সংগ্রহ করছেন স্থানীয় লোকজন © টিডিসি

ইট–পাথরের কোলাহল আর ব্যস্ততার ভিড়ে মানুষ যখন একটু প্রশান্তির খোঁজে ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে, তখন শরতের সাদা শুভ্র কাশফুল তাদের জন্য হয়ে ওঠে এক বিশেষ সৌন্দর্য। তবে এই নরম, বাতাসে দুলে ওঠা ফুলের আড়ালেই লুকিয়ে আছে নদীপাড়ের মানুষের জীবনের বাস্তব গল্প—অর্থনীতি, টিকে থাকা আর পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর নির্ভরতা। বিনা আবাদে এই কাশগাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চরবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এখন কাশগাছ কাটার মৌসুম চলছে। বন্যার পানি নামার পর এসব চরজমিতে কোনো পরিচর্যা ছাড়াই জন্ম নেয় কাশগাছ। প্রকৃতির নিয়মে বেড়ে ওঠা এই গাছগুলো ফুল ঝরে যাওয়ার পর কৃষকরা কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। কোনো খরচ নেই, ঝামেলা নেই—তবু এই কাশই নদীপাড়ের মানুষের জীবিকা টিকিয়ে রাখার বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘এক টাকাও খরচ করতে হয় না। আমরা শুধু কেটে শুকাই। বছরের এই সময়টাতেই হাতে কিছু টাকা পাই, এই কাশগাছই আমাদের পরিবার চালায়।’

শুধু জমির মালিক নয়, কাজহীন দিনমজুরদের কাছেও এ মৌসুম স্বস্তি বয়ে আনে। প্রতিটি শুকনো কাশের বোঝা আকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকরা আয় করছেন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। নদীভাঙন, কর্মহীনতা আর আর্থিক সংকটের মাঝেও এই আয় তাদের জন্য এক টুকরো নিশ্চয়তা।

রাজশাহী থেকে কাশগাছ কিনতে আসা আবুল হোসেন বলেন, ‘কুড়িগ্রামের সব চরে প্রচুর পরিমানে কাশগাছ হয়। এই সময়ে আমরা এখান থেকে কিনি। এ কাশগাছ দিয়ে পানের বড়জ করে পান চাষীরা। এ ব্যবসা করে ভালোই লাভবান হচ্ছি।’

রহিম নামের এক দিনমজুর বলেন, ‘বছরের অনেক সময় কাজ থাকে না। এই কাশ কাটার মৌসুমটাই আমাদের ভরসা। তখন কয়েকদিন কাজ পাই সেটা দিয়েই পরিবারটা বাঁচাই।’

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কাশ শুধু আয়ই দেয় না—চরের বালুময় জমিতে পলি ধরে রাখে। পরিবেশ ও মাটির জন্যও খুব উপকারী।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, এই প্রাকৃতিক কাশগাছকে পর্যটন, হস্তশিল্প বা ওষুধশিল্পে ব্যবহার করা গেলে আরও সম্ভাবনা তৈরি হবে। শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে নদী পাড়ের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ আসবে। বায়ুদূষণ কমাতেও কাশের  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।