মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে আলো ছড়ালেন ফিলিস্তিনি মডেল নাদিন আইয়ুব
- ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৬
থাইল্যান্ডের পাকক্রেট শহরে অনুষ্ঠিত হলো ‘মিস ইউনিভার্স ২০২৫’-এর ৭৪তম আসর। এবারের আয়োজনে সবচেয়ে আলোচিত মুখদের একজন ফিলিস্তিনি মডেল নাদিন আইয়ুব। ২৭ বছর বয়সী এই তরুণী প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে অংশ নেন বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা মিস ইউনিভার্সে। এ অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। রামাল্লার মেয়ে নাদিন যেন পুরো ফিলিস্তিনি জাতির সাহস, সংগ্রাম ও স্বপ্নের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন সেই মঞ্চে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বসবাসরত নাদিন আইয়ুব ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে উজ্জ্বল ছিলেন মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে। এটি শুধুই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নয়, ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, সংগ্রাম ও পরিচিতি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী অর্জন। নাদিন বলেন, ‘আমি প্রতিটি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর প্রতিনিধিত্ব করছি—যাদের শক্তি বিশ্বের সামনে তুলে ধরা উচিত।’
নাদিন আইয়ুব কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও ইউনিভার্সিটি থেকে মনোবিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরিই তার প্রধান কাজ। পাশাপাশি তিনি একজন সার্টিফাইড নিউট্রিশনিস্ট। কর্মজীবনের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে তিনি দুবাইয়ে বসবাস করছেন এবং আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অঙ্গনেও সক্রিয়।
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ‘মিস ফিলিস্তিন’ খেতাব অর্জন করেন নাদিন। একই বছর ‘মিস আর্থ ২০২২’ প্রতিযোগিতায় ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে তিনি পৌঁছে যান শীর্ষ পাঁচে। এটি ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ইতিহাসে প্রথম বড় সাফল্য। এই অভিজ্ঞতাই তাকে আরও সাহসী করে তোলে এবং ২০২৫ সালে মিস ইউনিভার্সে ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের বড় দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন।
নাদিন শুধু একজন মডেল নন; তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এক তরুণ চিন্তানেত্রী। ফিলিস্তিনি নারীদের শিক্ষা, ডিজিটাল স্কিল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)–ভিত্তিক শেখার সুযোগ দিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘গ্রিন অলিভ একাডেমি’ নামে প্রযুক্তি–ভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান।
তিনি ‘প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড (PCRF)’–এর প্রতিনিধিও। এই সংস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত ও আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও মানবিক সাহায্যে কাজ করে। নাদিন নিয়মিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশুদের কষ্ট এবং নারীদের দুর্দশা নিয়ে কথা বলেন—বিশ্বমঞ্চে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন।
মিস ইউনিভার্স ২০২৫–এর মঞ্চে তার উপস্থিতি যেন ছিল সাহস, মর্যাদা এবং আত্মপরিচয়ের দৃঢ় ঘোষণা। তিনি শুধু এক প্রতিযোগী নন, তিনি এক জাতির আশা, দৃঢ়তা এবং সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।