সিটি ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে পারটেক্স স্টার গ্রুপের জালিয়াতি, তদন্ত করতে আইনজীবীর চিঠি
- ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৫৪
সিটি ব্যাংকের জমাকৃত অর্থ ব্যবহার করে নাবিল গ্রুপের মাধ্যমে পারটেক্স স্টার গ্রুপের তিনটি ইউনিট অধিগ্রহণে জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বার্থের সংঘাত ও মানিলন্ডারিং অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে আবেদনটি জমা দেন তিনি।
আবেদনে আইনজীবী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে যে পারটেক্স স্টার গ্রুপের তিনটি শিল্প ইউনিট স্টার পার্টিকেল বোর্ড মিলস লিমিটেড,পারটেক্স ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও পারটেক্স পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
নাবিল গ্রুপের নিকট অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংকের জমাকৃত আমানতের অর্থ অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা জালিয়াতি, কারসাজি, অভ্যন্তরীণ যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত গুরুতর অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজিজ আল কায়সার যিনি পারটেক্স স্টার গ্রুপের এই তিনটি কোম্পানির সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার ছিলেন, হঠাৎ পদত্যাগ করেন এবং এর অল্প সময় পরেই নাবিল গ্রুপকে ঐ তিনটি ইউনিট বিক্রি সম্পন্ন হয়।
আবেদনে ওই আইনজীবী আরো উল্লেখ করেন,অভিযোগ রয়েছে যে নাবিল গ্রুপের প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা অধিগ্রহণমূল্যর অধিকাংশ অর্থ সিটি ব্যাংক থেকেই নাবিল গ্রুপের নামে অনুমোদিত ১,৮০০ কোটির ঋণসীমা ব্যবহার করে পরিশোধ করা হচ্ছে, যা ওই ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ। ঋণ সুবিধা বাড়ানোর প্রক্রিয়া, জামানত এবং অনুমোদনের সময়সীমা নিয়ে গুরুতর অনিয়ম, প্রভাব খাটানো ও অভ্যন্তরীণ যোগসাজশের অভিযোগ করছেন ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, লেনদেনটি পূর্বপরিকল্পিত, যেখানে সিটি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান, বোর্ডের প্রভাবশালী সদস্যবৃন্দ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিনের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নাবিল গ্রুপের সাথে এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেশের প্রচারমাধ্যমে এসেছে, এবং দুদকে মামলা চলমান রয়েছে। ফলে এই অধিগ্রহণটি দেশের ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া পারটেক্স স্টার গ্রুপের তিনটি শিল্প ইউনিটের পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে অস্বাভাবিক শেয়ার হস্তান্তর এবং হঠাৎ পদত্যাগ এসবই ইঙ্গিত করে যে অধিগ্রহণের পূর্বে শেয়ার কাঠামোকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন ও প্রস্তুত করা হয়েছিল, যা সন্দেহজনক উদ্দেশ্য নির্দেশ করে।
এতে বলা হয়, উল্লিখিত অভিযোগসমূহ অত্যন্ত গুরুতর এবং এতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা, জনগণের আমানত এবং আর্থিক শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় চারটি বিষয় তদন্তের জন্য আবেদন করছি। বিষয়হুলো হলে- সিটি ব্যাংকের নাবিল গ্রুপকে প্রদত্ত ১,৮০০ কোটি টাকার ক্রেডিট লিমিটের অনুমোদন প্রক্রিয়া যাচাই, ওই ঋণসীমা ব্যবহার করে পারটেক্স স্টার গ্রুপের তিনটি ইউনিট অধিগ্রহণের অর্থায়ন বন্ধ রেখে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ, সাবেক চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ওই সময়ের বোর্ড সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্পৃক্ততা যাচাই এবং সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, ঘুষ প্রদান এবং সংঘবদ্ধ প্রতারণা বিষয়ক তদন্ত।