অনন্য এক তারেক রহমান
- ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:১৪
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুকাল ধরেই নেতাদের ভাষা হয়ে আছে আদেশ, নির্দেশ, ক্ষমতার প্রদর্শন এবং আনুগত্যের দাবি। অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃত ভাষা হওয়া উচিত মানুষের ভাষা, সহমর্মিতার ভাষা; একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠবেন মানুষেরই কণ্ঠস্বর। তাই যখন কোনো এক অপ্রস্তুত বিকেলে ফোনের ওপাশ থেকে উচ্চারিত হয়—“বোন, আমি তারেক বলছি”—এই অতি সাধারণ পাঁচটি সাধারণ শব্দই হয়ে ওঠে অসাধারণ, অনন্য। কারণ এর মধ্যে আছে মানবিক রাজনীতির সেই বোধ, সেই ভাবাবেগ যা বহুদিন ধরে আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
বরগুনার সেই মর্মান্তিক ঘটনায় যখন এক তরুণী অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার, আর তাঁর বাবা মন্টু চন্দ্র দাস নির্মমভাবে খুন হন, চারিদিকে তখন অজানা নীরবতা, অস্ফুট বেদনায় আচ্ছন্ন সবাই, পাশে দাঁড়ানোর মতো নেই কেউই। ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করে তাঁকে সান্ত্বনা দেন, পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এই সংক্ষিপ্ত ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই চারদিকে আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। কারণ বহুদিন পর মানুষ অনুভব করল, রাজনীতিতে এখনো এমন একজন নেতা আছেন, যিনি ক্ষমতার বাইরে থেকেও মানুষের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ান, মানুষের কষ্ট বোঝেন, শুধু একজন নেতা হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে, মানুষের বন্ধু হিসেবেও।
এসব দৃশ্যই আমাদের গভীরভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, আশাবাদী করে দেয়, মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতি কেবল ক্ষমতা দখলের লড়াই নয়, মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত একটি নৈতিক দায়িত্ব। তাঁর এই ফোনকল, সহানুভূতি কিংবা ভালোবাসার নিদর্শন শুধু নয়, এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক নৈতিক পুনর্জাগরণ। চারিদিক অস্থির, এমন এক সময়ে, যখন দেশের রাজনীতি মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে, তখন তারেক রহমান দেখিয়েছেন নেতৃত্ব মানে মানুষের কষ্ট মনোযোগ সহকারে শোনা, হৃদয় দিয়ে অনুভব করা এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো।
কিছুদিন আগে, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায় শামসুল আলম ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের মেধাবৃত্তি অনুষ্ঠানে ফুটে ওঠে তারেক রহমানের চিন্তা ভাবনার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এক শিশু সরলভাবে প্রশ্ন করেছিল, “আংকেল, আপনি যে কথা বলছেন, তা সত্যি করবেন, তা আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব?” প্রশ্নটি ছোট হলেও, রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের গভীর সংশয়কে প্রকাশ করে। তারেক রহমানের উত্তর ছিল “তোমরা তোমাদের বাবা-মাকে বলবে, তারেক আংকেলের সাথে আমার কথা, তাঁরা দায়িত্বে গেলে কাজগুলো করব। আর যদি না করি, পরেরবার আমাদের ভোট দেবে না।”
এই অনিন্দ্যসুন্দর বাক্যগুলো যেন সরাসরি গণতন্ত্রের পাঠ। রাজনীতি প্রতিশ্রুতির প্রদর্শন বা বক্তৃতার ঝলক নয়; রাজনীতি হলো জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা। নেতার প্রতি নয়, জনগণের প্রতি আস্থা অর্জন ও জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বার্তা।
এই একই অনুষ্ঠানে অন্য একজন নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন—“চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে অনুষ্ঠানের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছি” কিন্তু তারেক রহমান সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিলেন—“সবকিছু আমার নামে চালিয়ে দেবেন না। আমি এমন কোনো নির্দেশ দিইনি।”
এই মন্তব্য শুধু একটি ব্যক্তিগত বিরক্তির প্রতিফলন নয়, এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীর সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। যেখানে নেতা নয়, নীতি সামনে থাকা উচিত, যেখানে ব্যক্তিবাদ নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নৈতিকতা প্রাধান্য পাবে।
পাকুন্দিয়ার সেই অনুষ্ঠানে আরেকটি দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়। এক কিশোরী জানায়, সে ডাক্তার হতে চায়, কিন্তু অঙ্ক পড়তে ভালো লাগে না। তারেক রহমান হেসে বললেন, “আমারও অঙ্ক ভালো লাগত না। কিন্তু ভালো কিছু পেতে হলে কষ্ট করতেই হয়।” এই সহজ, কিন্তু গভীর উত্তরটিতে আজকের তরুণদের জন্য বাস্তবতার শিক্ষা ছিল। তাঁর কথায় নেই জনতুষ্টির শব্দ, আছে দায়িত্ববোধ, বাস্তবতা এবং আত্মনির্ভরতার বার্তা।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন সবসময়ই ক্ষমতার চেয়ে মানুষের কল্যাণকে সামনে আনে। তিনি বারবার বলেছেন, “আমাদের ওপর যে অন্যায় হয়েছে, তার প্রতিশোধ আমরা নেব প্রতিহিংসা দিয়ে নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।” এই দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। যেখানে প্রতিপক্ষ মানেই শত্রু নয়, যেখানে ভিন্নমত মানে ষড়যন্ত্র নয়, বরং রাজনীতির উদ্দেশ্য হবে সংস্কার, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়।
রাজনীতির ভেতর তাঁর অবস্থান কখনোই ক্ষমতার কেন্দ্রিক হয়নি। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় পদ গ্রহণ করেননি, কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি। নিজেকে ক্ষমতার উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা না করে তিনি বরং ছুটেছেন মানুষের কাছে, তৃণমূলে। পশুপাখির প্রতি তাঁর সহমর্মিতা, অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সংগঠন গড়া, ভ্যাকসিন প্রদান, জরুরি সার্ভিস চালু এসবই দেখায় তাঁর মানবিক নেতৃত্বের মাত্রা।
রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন গাবতলী উপজেলার একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে, এই জায়গা থেকেই তিনি শিখেছেন মানুষের ভাষা, মানুষের জীবন।
তরুণরা তাঁকে ডাকে “ভাইয়া” বলে। এই সম্বোধনে আছে বিশ্বাস, আবেগ, এবং নিরাপত্তার অনুভূতি। তিনি কারো কাছে আংকেল, কারো কাছে ভাই, কিন্তু সবার কাছে নেতা, একজন মানবিক নেতা।
আজ যখন দেশের রাজনীতি অস্থিরতা, বিভাজন ও সন্দেহে ঘেরা, তখন তারেক রহমান একটি নতুন পথ দেখাচ্ছেন, যেখানে রাজনীতি হতে পারে মানবিক, নীতি-নির্ভর, যুক্তিনিষ্ঠ এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাঁর নেতৃত্ব আমাদের শিখায় রাজনীতি মানে কেবল প্রতিরোধ নয়, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, কেবল আবেগ নয়, দায়িত্ব, কেবল ক্ষমতা নয়, সেবা।
যদি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এই মানবিক ও নৈতিক দর্শনে পরিচালিত হয়, তবে একদিন আমরা এমন একটি রাষ্ট্র দেখতে পাব, যেখানে রাজনীতি হবে মানুষের কল্যাণের, ন্যায়–সমতার এবং আগামী প্রজন্মের জন্য আশাব্যঞ্জক।
তারেক রহমান আজ সেই পরিবর্তনের অগ্রদূত, যিনি রাজনীতিকে ফের এনেছেন মানুষের কাছে, হৃদয়ের কাছে, মানবতার কাছে।
লেখক: ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক