ইসরায়েলি হামলায় গাজার ঐতিহাসিক প্রাসাদ ধ্বংস করে ২০ হাজার প্রত্নবস্তু লুট
- ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৪
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার বহু শতাব্দীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামাস নির্মূলের লক্ষ্য দেখিয়ে শুরু করা এই যুদ্ধের ধাক্কা এড়িয়ে যেতে পারেনি গাজার প্রত্নস্থলগুলোও। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই হামলায় প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ওসমানীয় আমল পর্যন্ত বিস্তৃত অন্তত ২০ হাজার বিরল প্রত্নবস্তু হারিয়ে গেছে বা লুট হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলতেই ইসরায়েল গাজার প্রত্নস্থলে পদ্ধতিগত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৩১৬টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও ঐতিহাসিক ভবন পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে। ধ্বংস হওয়া এসব স্থাপনার বড় অংশ মামলুক ও ওসমানীয় আমলের; এছাড়া প্রাথমিক ইসলামি যুগ ও বাইজেন্টাইন আমলেরও অনেক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞের আঘাত এড়াতে পারেনি মামলুক আমলে নির্মিত ইউনেস্কো-স্বীকৃত ঐতিহাসিক প্রাসাদ কাসর আল-বাশাও। প্রায় ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পুরোনো এই স্থাপনাটির প্রায় ৭০ শতাংশ অংশ ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে বলে জানান পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে সেন্টার ফর কালচারাল হেরিটেজ প্রিজারভেশনের বিশেষজ্ঞ হামুদা আল-দাহদার।
গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ছড়িয়ে আছে বহু প্রত্নবস্তু। স্থানীয় টেকনিশিয়ান ও কর্মীরা সরল যন্ত্রপাতি দিয়ে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে গাজার অবশিষ্ট ইতিহাস অন্তত কিছুটা রক্ষা পায়।
থাওয়াবতে বলেন, ‘গাজার ঐতিহ্যের ওপর এই আক্রমণ শুধু ধ্বংস নয়— ছিল সুসংগঠিত লুটপাট। আন্তর্জাতিক আইনে এটি গুরুতর অপরাধ, যা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত।’ তিনি জানান, স্থানীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে ওসমানীয় যুগ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু যুদ্ধের সময় উধাও হয়ে গেছে।
দাহদারও নিশ্চিত করেন, প্রাসাদে ইসরায়েলি হামলার পর হাজারো বিরল প্রত্নবস্তু নিখোঁজ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রত্নবস্তুই ছিল ফিলিস্তিনের ইতিহাসের অংশ, যা প্রতিটি যুগের সাংস্কৃতিক অধ্যায়কে তুলে ধরত। এসব লুটপাট জাতির পরিচয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এটি মানবতার সমষ্টিগত ঐতিহ্যের ওপর গুরুতর অপরাধ।’
তিনি আরও জানান, ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের আগে বিভিন্ন সামরিক অভিযানে এই প্রাসাদটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেনা প্রত্যাহারের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেটি সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে গাজা দখল করে এবং ১৯৯৪ সালে অসলো চুক্তি অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহার করে। পরে ২০০৫ সালে ‘ডিসএনগেজমেন্ট প্ল্যান’–এর অংশ হিসেবে গাজার বসতি সরিয়ে নেয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান সর্বশেষ যুদ্ধেও আবার ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয় এই প্রাসাদ। একই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন— যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু; আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। পুরো অঞ্চল এখন এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।