আবুজর গিফারী কলেজ

গভর্নিং বডির সভাপতির ‌‘পদত্যাগ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন’ ডাকায় ক্ষমা চাইলেন শিক্ষকরা

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা © টিডিসি ফটো

রাজধানী ঢাকার মালিবাগের আবুজর গিফারী কলেজে নানা অনিয়মে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী। সেখানকার শিক্ষকদের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে গত ১১ মে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

জানা গেছে, সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদান করে চাকরিবিধি বিধান লঙ্ঘন করেছিলেন ওই শিক্ষকরা। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতির নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে আবেদন করেছেন। আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে কলেজে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চাইলেন তারা।

এ সময় কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, জীববিজ্ঞান বিভাগের জুলেখা বেগম, বিবিএ প্রফেশনালের ফরিদ আহমদ, মার্কেটিং বিভাগের নেছার উদ্দিন জাহিদ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের হাজেরা তুল কোবরা সুইটি, সিএসই বিভাগের দেওয়ান মোহাম্মদ যুবরাজ আল ফাহাদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লিপি বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: আবুজর গিফারী কলেজে আওয়ামীপন্থী ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিপাকে সভাপতি

সংবাদ সম্মেলনে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ওয়াহিদ উজ জামান বলেন, গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষকরা যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেটি উনার প্রতি একটা অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। আমরা যা করেছি না বুঝেই করেছি। এজন্য স্যারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি কলেজের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যাওয়াটা ছিল আমাদের ভুল। আমরা ভুল বুঝতে পেরেছি। এজন্য আমরা আজকে সভায় যে সিদ্ধান্ত হবে সেটি সবাই মেনে নেবো।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগে কলেজটির পরিচালনা কমিটি থেকে অধ্যক্ষ সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘মব’ তৈরি করে আবুজর গিফারী কলেজ দখলের চেষ্টা 

দায়িত্ব নেওয়ার পর গত মার্চে কলেজের অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন বিল-ভাউচার দিয়ে কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। পরে আওয়ামীপন্থী ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে, কলেজটিতে বর্তমানে ৭৮ জন এমপিও ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছে। তথ্য অনুসন্ধান কমিটির সেই তদন্তে দেখা যায়, কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিরিন আক্তার মজুমদার ও সিএসই বিষয়ের শিক্ষক দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নেই। যদিও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ আবশ্যক উল্লেখ ছিল।

তদন্ত কমিটি বলছিল, ২০০৫ সালের এনটিআরসিএ অনুযায়ী ২ জনেরই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ বিধি বহির্ভূত। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএসই বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু/অধিভুক্তি না পাওয়া সত্ত্বেও পূর্বের গভর্নিং বডি দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদকে সুপরিকল্পিতভাবে নিয়োগ প্রদান করেন যা সম্পূর্ণরূপে বিধি বহির্ভূত। সিএসই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের তারিখ মতে দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেননি, যা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের অযোগ্য বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন: ১৩ নভেম্বর ঘিরে নাশকতার চেষ্টা, আবুজর গিফারী কলেজের শিক্ষক রুহুল কুদ্দুস গ্রেপ্তার

তদন্ত কমিটির এসব পর্যবেক্ষণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠান কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

এদিকে, সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভায় চাকরিবিধি বিধান লঙ্ঘন করে সেই সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদান করার বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে তাদের শাস্তির জন্য আলাপ-আলোচনাও হয়। তবে মানবিক কারণে সেই ঘটনার জন্য শিক্ষকরা ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে শাস্তির বিষয়টি বিবেচনাধীন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি সভার রেজুলেশনেও বিষয়টি লিখিত আকারে তুলে ধরা হয়। এরই প্রেক্ষিতে আজকে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চাইলেন শিক্ষকরা।