চার বিয়ের ব্যাপারে ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি: তুলি

সানজিদা ইসলাম তুলি
সানজিদা ইসলাম তুলি © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে এক কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকা-১৪ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের সংসদ সদস্য প্রার্থী মানবাধিকার কর্মী সানজিদা ইসলাম তুলির দেয়া বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। তুলি গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাকে’র সমন্বয়ক। তার বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য করছেন অনেকে। রীতিমত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তুলি।

রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌন মিছিল ও সমাবেশে নারীর অধিকারসংক্রান্ত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তুলি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। অনেকে তার পক্ষেও দাড়িয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তুলির বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগও জানিয়েছে। সংগঠনটি বিবৃতিতে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

এদিকে নারীর অধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলেননি বলে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তুলি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সানজিদা ইসলাম তুলি লিখেছেন, নারীর অধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে আমি চার বিয়ের ব্যাপারে ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। কুরআন ও সুন্নাহতে একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে, তবে শর্ত হলো ন্যায়বিচার (সুরা নিসা ৪:৩)।

ইসলামে একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, তবে কঠোর শর্ত হলো—প্রতিটি স্ত্রীকে সময়, অর্থ, অধিকার ও মর্যাদায় পূর্ণ সমান ন্যায়বিচার করতে হবে। কুরআন স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, যদি ন্যায়বিচার করা সম্ভব না হয়, তবে ‘একটিতেই সীমাবদ্ধ থাকো’ (সূরা আন-নিসা ৪:৩)। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘বিয়ে প্রকাশ করে করো’ (তিরমিজি)। 

সানজিদা তুলি আরও লিখেছেন, আমাদের বুঝতে হবে—ইসলাম নারীর সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তাই শুধুমাত্র আইনের একটি অংশ ধরে নয়, পুরো নির্দেশনা অনুসারে চলা জরুরি। সমাজের দায়িত্ব হলো নারীর সকল অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা।

তিনি লিখেছেন, তাই আমার বক্তব্য ছিল শুধু এই—আমাদের বোনদের ধোঁকা দিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করা, তাদের হক থেকে বঞ্চিত করা এবং প্রতারণা করা ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলাম ন্যায়, স্বচ্ছতা ও আমানতের ওপর জোর দেয়, প্রতারণার ওপর নয়। দয়া করে আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে বা ভিন্ন ব্যাখ্যায় উপস্থাপন করবেন না। আমি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী। কেউ ধর্মীয়বোধে আঘাত পেলে আমি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত।

এদিকে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাকে’র সমন্বয়ক ও ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জনপরিসর এবং সাইবার স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার (১৫ নভেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক আয়োজিত এক মৌন মিছিল ও সমাবেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলির নারীর অধিকারসংক্রান্ত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন, যা কেবল নিন্দনীয় নয়, উদ্বেগজনকও বটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।