বিশ্বে ব্যাংক ব্যবস্থা যেভাবে এল

ব্যাংক
ব্যাংক © সংগৃহীত

মানুষ যখন প্রথমবার মাটির নিচে সোনা লুকিয়ে রাখল, তখনই আধুনিক ব্যাংকিং ধারণার বীজ বপন হয়ে গেল। কিন্তু আজকের বহুতল ভবনে থাকা অত্যাধুনিক ব্যাংক, আন্তর্জাতিক লেনদেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং এসবের পিছনে রয়েছে কয়েক হাজার বছরের বিবর্তন। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকও বদলেছে, পাল্টেছে এর ভূমিকা ও কাঠামো। জেনে নেওয়া যাক কীভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল আধুনিক ব্যাংকিংয়ের।

প্রাচীন মেসোপটেমিয়া: ব্যাংকিংয়ের প্রথম সকাল
ব্যাংকিংয়ের প্রথম চিহ্ন পাওয়া যায় প্রায় ৪,০০০ বছর আগে, মেসোপটেমিয়ার মন্দির ও রাজপ্রাসাদে। সেই সময় সাধারণ মানুষ সোনা-রুপা, শস্য, তেল বা কিছু মূল্যবান সম্পদ মন্দিরে জমা রাখত। মন্দির কর্তৃপক্ষ এগুলো পাহারা দিত এবং রসিদ দিত। এগুলোই ছিল ব্যাংকিংয়ের প্রথম ‘ডিপোজিট স্লিপ’। এমনকি সুমেরীয়রা ‘ঋণ’ দিত শস্য বা রুপার হিসাব ধরে। পরে সুদ আদায়ের নিয়মও চালু করে।

প্রাচীন গ্রিস ও রোম: সুদের জন্ম, লোনের প্রসার
গ্রিক শহরগুলোতে ‘ট্রাপেজিতাই’ নামে ব্যাংকাররা ব্যবসায়ীদের অর্থ জমা নিত, লোন দিত, এমনকি মুদ্রা বিনিময় করত। রোমান সাম্রাজ্যে ব্যাংকারদের বলা হতো ‘আর্জেন্টারি’। তারা নিরাপদে সম্পদ সংরক্ষণ, ঋণ প্রদান, ব্যবসায়ীদের বিল আদায় এমনকি চেকের মতো লেনদেনও পরিচালনা করত। রোমানদের তৈরি করা প্রাথমিক চেক সিস্টেমকেই আধুনিক চেকিং অ্যাকাউন্টের পূর্বসূরি বলা হয়।

মধ্যযুগ: স্বর্ণকারদের ভল্ট থেকে আধুনিক ব্যাংকের জন্ম
ইউরোপে যখন যুদ্ধ, বাণিজ্য ও ধর্মীয় সংঘর্ষে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, সাধারণ মানুষ সোনা রাখার জায়গা খুঁজতে থাকে। এই সুযোগে ইংল্যান্ড ও ইতালির স্বর্ণকাররা (goldsmiths) তাদের ভল্টে মানুষের সোনা রাখার ব্যবস্থা করে। সোনা জমা দিলে তারা রসিদ দিত। এই রসিদই পরে বিনিময়যোগ্য হয়ে ওঠে। মানুষ স্বর্ণ না এনে রসিদ দিয়েই পেমেন্ট করতে শুরু করে। এভাবেই জন্ম নেয় banknote বা আধুনিক নোটের কাগজভিত্তিক ধারণা।

মেডিসি পরিবার এবং রেনেসাঁ যুগ: আন্তর্জাতিক ব্যাংকিংয়ের উত্থান
১৪শ–১৫শ শতকে ইতালির মেডিসি পরিবার ফ্লোরেন্সে প্রথম বহুজাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। তাদের উদ্ভাবন: ডাবল-এন্ট্রি বুককিপিং (হিসাবরক্ষণের আধুনিক নিয়ম), আন্তর্জাতিক শাখা, রাজপরিবার ও সম্রাটদের জন্য বিশেষ লেনদেন, দীর্ঘ দূরত্বে টাকা পাঠানোর ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’ এ সবই মিলে আধুনিক বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ের ভিত্তি বানায়।

ইংল্যান্ডের ব্যাংক এবং সেন্ট্রাল ব্যাংকিংয়ের সূচনা
১৬৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ বিশ্বের প্রথম প্রকৃত আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  তাদের কাজ ছিল: রাষ্ট্রের যুদ্ধ খরচের জন্য ঋণ প্রদান, সরকারি বন্ড ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা ছাপানো, আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা পরে ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং আজকের বিশ্বব্যাপী আর্থিক স্থিতিশীলতার মূল স্তম্ভ হয়ে ওঠে।