জুমার দিনের ফজিলত ও অবহেলার পরিণতি
- ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০২
ইসলাম ধর্মে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত জুম্মা দিন। এটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুমার দিনের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ‘জুমা’ নামে একটি সুরাও নাজিল করেছেন। কোরআনুল কারিমের ৬২তম সুরা এটি।
জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতোই। তাই জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়। এটি কেবল বিশ্রামের দিন নয়, বরং মুমিনদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নেয়ামতের এক মহামূল্যবান সময়।
ইসলামের ইতিহাসে জুমার নামাজের সূচনা মদিনায় হিজরতের পূর্বে, যখন নবী করিম (সা.) কুবা থেকে মদিনার পথে ছিলেন। বানু সালিম গোত্রের স্থানে প্রথমবার সাহাবিরা জুমার নামাজ আদায় করেন, যা মুসলমান সমাজে একতা ও শৃঙ্খলার এক অনন্য নিদর্শন।
ফজিলত :
রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সূর্য উদিত হওয়া দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন, এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এ দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে নামানো হয়েছিল। (সহিহ মুসলিম)।
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, যতটুকু সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে, মসজিদে গিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে ও ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়, আরও তিন দিনের অতিরিক্ত পাপ মাফ হয়। (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিস প্রমাণ করে, জুমার নামাজ আল্লাহর মাফ পাওয়ার বিশাল সুযোগ। সপ্তাহের নানা ব্যস্ততা, ভুল, গুনাহ ও অবহেলা— সবকিছুর পর এই দিন মুসলমান আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর করুণার দ্বার খোলে।
আরেক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে একটি আলোকরশ্মি (নূর) জারি থাকে। (বায়হাকি)
অর্থাৎ, জুমার দিন কুরআন পাঠ ও বিশেষ আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তরে নূর ও প্রশান্তি দান করেন।
অবহেলার পরিণতি :
এত এত ফজিলত থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই এই জুমার নামাজে অবহেলা করে থাকি। যারা জুমার নামাজ অবহেলা করেন, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর সতর্কবার্তা।
জুমার নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া বড় গুনাহ। নবী করিম (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলার কারণে তিন জুমা একটানা বাদ দেয়, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
এই 'মোহর মারা' কথাটির অর্থ হলো তার হৃদয় সত্য ও নেক কাজের প্রতি অমনোযোগী হয়ে যায়। সে আর তওবা বা আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায় না, যতক্ষণ না আল্লাহ চান। এমন অবস্থা একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য।
অনেক আলেম বলেছেন, জুমার নামাজ ত্যাগ করা মানে মুসলিম সমাজের ঐক্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা। জুমা কেবল ব্যক্তিগত নামাজ নয়, এটি সমাজ ও মুসলিম উম্মাহর সংহতির প্রতীক। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ত্যাগ করলে ব্যক্তি একপ্রকার আল্লাহর আনুগত্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তিনবার একে একে জুমার নামাজ ত্যাগ করবে, আল্লাহ তার হৃদয়ে কঠোরতা স্থাপন করবেন' (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১১৮৮)।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি জুমার নামাজ ত্যাগ করবে, তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে এবং তার জন্য মন্দ ভাগ্য অপেক্ষা করছে'(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৪)।
জুমার নামাজ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক অনন্য নেয়ামত। এটি এমন এক ফরজ ইবাদত যা মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে, তার সপ্তাহজুড়ে করা ছোটোখাটো গুনাহ মোচন করে এবং তাকে নতুন করে আত্মশুদ্ধির পথে পরিচালিত করে। অন্যদিকে, যারা অবহেলা করে জুমার নামাজ ত্যাগ করে, তারা কেবল একটি নামাজ হারায় না বরং হারায় আল্লাহর রহমতের সুযোগ, সমাজের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন ও আত্মিক শান্তি।
জুমার নামাজ মুসলিমদের একত্রিত হওয়ার এবং তাদের ইমানকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ। এটি অবহেলা করা কখনোই উচিত নয়, কারণ এর সঙ্গে সম্পর্কিত হাদিস এবং কুরআনের আয়াতগুলো নামাজের প্রতি আমাদের আরও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেয়।