দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকলে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি © সংগৃহীত

গরমে স্বস্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হিসেবে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এখন আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি সব জায়গায়ই এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু আরামের এই প্রযুক্তি দীর্ঘসময় ব্যবহারের কারণে শরীরের ওপর যে নীরব ক্ষতি সৃষ্টি করছে, তা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসির শীতল ও শুষ্ক পরিবেশ শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক সমস্যার জন্ম দেয়।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন
দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকার ফলে শরীর ক্রমেই কম তাপমাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে বাইরে বের হওয়ার সময় গরমের সঙ্গে হঠাৎ তাপমাত্রা পার্থক্য ‘থার্মাল শক’ তৈরি করে। এতে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অবসাদ এবং হিট স্ট্রেসের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে বাইরে গরমে হাঁটলেই মাথাব্যথা বা বমিভাব দেখা দেয়।

ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রে বিপত্তি
এসি রুমের বাতাস সাধারণত আর্দ্রতাহীন ও শুষ্ক থাকে। এই শুষ্কতায় ত্বক রুক্ষ, চুলকানি ও অ্যালার্জি, ঠোঁট ফাটা ও চোখের শুষ্কতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও শ্বাসযন্ত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। নাক-গলা শুষ্ক হয়ে যাওয়া, নাক বন্ধ থাকা, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির উপসর্গ বৃদ্ধি এই সমস্যাগুলো নিয়মিত এসি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা
দীর্ঘসময় ঠান্ডা পরিবেশে থাকার কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি সময় এসিতে কাটালে সর্দি-কাশি, ভাইরাস সংক্রমণ এবং অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা বাড়তে পারে। এসি ফিল্টারে ধুলো বা জীবাণু জমে থাকলে তা রুমের বাতাসে ছড়িয়ে গিয়ে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

পেশি ও অস্থিসন্ধির ব্যথা
অনেকেই অভিযোগ করেন—দীর্ঘক্ষণ এসিতে কাজ করলে ঘাড়-কাঁধে ব্যথা, পিঠে টান বা জোড়ায় ব্যথা দেখা দেয়। এর কারণ, অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশে পেশির স্বাভাবিক নমনীয়তা কমে যায়। অফিসে যারা স্থবির অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ার-টেবিলে বসে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরও তীব্র হয়।

জলশূন্যতা ও ক্লান্তি
শীতল রুমে থাকার কারণে অনেক সময় পানির প্রয়োজন অনুভূত হয় না। ফলে শরীরে ধীরে ধীরে ডিহাইড্রেশন তৈরি হয়। এসির বাতাস শরীর থেকে জলীয় অংশ দ্রুত শোষে নেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও ত্বকের সমস্যা বাড়ায়।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও আছে
অতি নির্ভরশীলতা মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলে। বাইরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকতে অস্বস্তি বোধ হয়, অনেকে বিরক্তি বা স্ট্রেস অনুভব করেন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে বাইরে খেলাধুলা কমে গিয়ে শারীরিক সক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি তৈরি হয়।

ক্ষতি কমাতে যা যা করা উচিত
এসির তাপমাত্রা ২৫–২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করা উচিত
প্রতি ঘণ্টায় কয়েক মিনিট করে রুমের জানালা খুলে বাতাস চলাচলের সুযোগ রাখা
প্রচুর পানি পান করতে হবে
এসি ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করা
দিনে কিছু সময় প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা
বাইরে যাওয়ার আগে কয়েক মিনিট ধীরে ধীরে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া

দৈনন্দিন জীবনে এসি নিঃসন্দেহে আরাম নিয়ে আসে। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যেন আরাম থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত না হয়, সেজন্য সচেতনতা জরুরি। দীর্ঘসময় ঠান্ডা কৃত্রিম পরিবেশে থাকার আগে—শরীরের নীরব ক্ষতির দিকগুলো একবার হলেও ভাবা দরকার।