গলাচিপায় খাস জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে নারীসহ আহত ২৫
- ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরবাংলা এলাকায় সরকারি খাস জমি দখল ও চাষাবাদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার হাওলাদার গ্রুপ এবং বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চরবাংলা এলাকার খাস জমি নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির স্থানীয় নেতা আনোয়ার হাওলাদার গ্রুপ ও বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজ খা গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ মীমাংসা হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে তরমুজ চাষ ও ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে পুনরায় সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- মো. নিজাম গাজী (৬৫), নুর মোহাম্মদ সিকদার (৭০), মো. আলম হাওলাদার (২৫), মো. কবির মেলকার (৫৫), মো. রিয়াজ মুসল্লী (৩৮), মো. হাসান সিকদার (৩৭), মো. আনোয়ার ফকির (৪৭), মো. সিরাজ খা (৬৫), মো. শফিক হাওলাদার (৪০), মো. বাবুল তালুকদার (৪৮), মো. বারেক ফকির (৬০), মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার (৪৯), মো. বেল্লাল ঢালী (৬০), মো. শাহীন মীর (৩০), মো. জালাল তালুকদার (৫০), মো. তৈয়ব মোল্লা (৪২), মো. ফরহাদ তালুকদার (২৭), মোসাঃ রেখা বেগম (৩৮), আকলিমা বেগম (৩০), নিলুফা বেগম (৪০), ছালেয়া বেগম (৬৫), ছালমা বেগম (৪৫), জাকিয়া বেগম (৪৫) ও খাদিজা বেগম (৩৫)।
এ বিষয়ে আহত জালাল তালুকদার বলেন, ভূমি অফিস থেকে ইজারা পাওয়া জমিতে চাষ দিতে গেলে চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান ও ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার হাওলাদারের নেতৃত্বে বাধা দেন। গত শনিবার ইউএনও ও ওসি উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে জমি ভাগাভাগি করে সমাধান দেন। আজ দুপুরে আমরা চাষ দিতে গেলে তারা হামলা চালায়।
আহত সাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, আমরা চরবাংলায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। উপজেলা ভূমি প্রশাসন আমাদের ১৫৫ জন কৃষককে জমি ইজারা দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা আমাদের সেই জমিতে চাষ করতে দিচ্ছেন না।
অন্যদিকে, চরবাংলা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আমাদের ঘর ছিল ওই জায়গায়। বৃহস্পতিবার অন্যরা ঘর তুলতে গেলে আমরা নিষেধ করি। এতে সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস বলেন, আমি দশমিনায় ছিলাম, পরে ঘটনা শুনেছি। প্রশাসনকে জানিয়েছি, তবে এ ঘটনায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি মো. মহিবুল্লাহ এনিম বলেন, ইউএনও ও স্থানীয় প্রশাসন সম্প্রতি শান্তিপূর্ণ সমাধান দিয়েছিল। পরবর্তীতে কীভাবে সংঘর্ষ হলো, তা আমি জানি না।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশাদুর রহমান বলেন, খাস জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। একপক্ষ ভূমি অফিস থেকে ইজারা পেয়েছে, অন্যপক্ষ চাষাবাদের অনুমতি পেয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে তরমুজ ক্ষেতের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এতে নারীসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখনও কোন পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, বিরোধীয় জমি নিয়ে শনিবার উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। আজ যারা বিরোধ করেছে, সেই সিদ্ধান্তে তারাও উপস্থিত ছিল। এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, খাস জমি দখল ইস্যুতে এর আগে উভয় পক্ষই একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে। স্থানীয় প্রশাসনও একাধিকবার সমঝোতার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বিরোধের অবসান ঘটেনি।