পূর্ণতা পেল না হামজার নৈপুণ্যের রাত!

হামজা! জাতীয় স্টেডিয়াম জুড়ে শুধু তারই নামধ্বনি
হামজা! জাতীয় স্টেডিয়াম জুড়ে শুধু তারই নামধ্বনি © সংগৃহীত ছবি

হামজা, হামজা, হামজা! জাতীয় স্টেডিয়াম জুড়ে শুধু তারই নামধ্বনি। লেস্টার সিটির এই তারকা ফুটবলার যেন একাই ছাপিয়ে গেলেন সবাইকে। অবিশ্বাস্য এক বাইসাইকেল কিকে দর্শকদের মুগ্ধ করেন, যা নিঃসন্দেহে লাল-সবুজের জার্সিতে দেখা সেরা গোলগুলোর একটি। এরপর পেনাল্টি থেকেও করেন নির্ভুল গোল, বাংলাদেশের জার্সিতে যা তার চতুর্থ গোল।

তবে হামজার এমন নৈপুণ্যের রাত শেষ পর্যন্ত জয়ে রূপ পায়নি। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে কর্নার থেকে গোল হজম করে বাংলাদেশ। মূলত হামজাকে উঠিয়ে নেওয়ার পরপরই ছত্রভঙ্গ হয় লাল-সবুজ শিবির। শেষমেশ নেপালের সঙ্গে ২–২ সমতায় মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিকদের।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় স্টেডিয়ামে ১০ম মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া উঁচু করে বল পাঠান ফাহিমের উদ্দেশে। ডান প্রান্তে বল পেয়ে ফাহিম দারুণ এক ক্রস তোলেন সোহেল রানা জুনিয়রের দিকে। কিন্তু বক্সে থাকা সোহেল বলটিতে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন, ফলে হাতছাড়া হয় সম্ভাব্য গোলের সুযোগও।

২৬তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিকরা। বক্সের ভেতরে বল পেয়েছিলেন ফাহিম, পাশে ফাঁকা অবস্থায় ছিলেন রাকিব। কিন্তু শট নেবেন নাকি পাস দেবেন, এই দ্বিধায় পড়েন ফাহিম। শেষ পর্যন্ত তার নেওয়া শট সহজেই রুখে দেন নেপালের গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বু।

এর মাত্র তিন মিনিট পরই প্রতি আক্রমণে গোল করে এগিয়ে যায় নেপাল। বক্সের বাম-প্রান্ত থেকে সুমিত শ্রেষ্ঠার নিখুঁত ব্যাক পাস পেয়ে রোহিত চাঁদ বাঁ-পায়ের জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন। অবশ্য, মিতুলের আর কিছুই করার ছিল না।

পরের মিনিটেই আবারও সুযোগ তৈরি করেছিলেন ফাহিম, তবে তার নেওয়া দুর্বল শট সহজেই ধরে ফেলেন নেপালের গোলরক্ষক লিম্বু। 

৩৬তম মিনিটে আরও একবার গোলের দারুণ সুযোগ পান ফাহিম। সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো বল বক্সের ভেতর নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি, কিন্তু তার জোরালো শটটি দক্ষতার সঙ্গে ঠেকিয়ে দেন নেপালের ডিফেন্ডার অনন্ত। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় লাল-সবুজেরা।

বিরতি থেকে ফেরার পরপরই হামজা চৌধুরীর দারুণ এক মুহূর্তে উল্লাসে মাতে জাতীয় স্টেডিয়াম। মাঠে উপস্থিত দর্শকরাও মুগ্ধ হন হামজার অসাধারণ নৈপুণ্যে।

৪৬তম মিনিটে গোল এনে দেন হামজা। ডানপ্রান্ত থেকে ফাহিমের ক্রস নেপালের এক ডিফেন্ডার হেড করে বিপদমুক্ত করতে চাইলেও বল ফিরে আসে বক্সের বাইরে থাকা জামাল ভূঁইয়ার কাছে। তিনিও দ্রুতই বলটি বাড়িয়ে দেন হামজার দিকে, আর বাইসাইকেল কিকে দুর্দান্তভাবে জালে বলটি পাঠান লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার।

দুই মিনিটের মধ্যেই ম্যাচে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ, আবারও নায়ক হামজা। নেপালের বক্সে রাকিব ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। স্পট কিক নিতে এগিয়ে আসেন হামজা। ঠাণ্ডা মাথায় নেওয়া তার নিখুঁত শট বুঝতেই পারেননি নেপালের গোলরক্ষক।। বল জালে জড়াতেই লিড পায় বাংলাদেশ।

এরপর খেলায় প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশেরই নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ৮০ মিনিটে হামজাকে তুলে নেন, এরপর নেপালের খেলা কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। নেপালের একটি আক্রমণ ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে এবং ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে অনন্ত তামাং নিখুঁত ফ্লিকে বলটি জালে পাঠান। বাংলাদেশের ডিফেন্সের জটলা এবং গোলকিপার মিতুলকে পরাস্ত করে সমতা পায় নেপাল।

অবশ্য, শেষ মুহূর্তে গোল হজম করা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। ৯ অক্টোবর ঢাকায় হংকংয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৩–৩ গোলে সমতায় থাকা বাংলাদেশ ইনজুরি সময়ের গোলে করে হেরে গিয়েছিল। এক মাস পর এই নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে সেই একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হলো।