জবি ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক ও লিখিত না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
- ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১৬
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত প্রশ্ন ও নেগেটিভ মার্কিং পদ্ধতি বাদ দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন এবং ভর্তি পরীক্ষার মান রক্ষায় লিখিত প্রশ্ন ও নেগেটিভ মার্কিং পুনর্বহালের দাবি তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ও ভর্তি কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, লিখিত খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একই উত্তরের জন্য বিভিন্ন শিক্ষকের নম্বরের তারতম্য দেখা দেয়। এ জন্য এবার শুধু এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এমসিকিউ প্রশ্ন হবে গতানুগতিক মুখস্থনির্ভর নয়। এ ছাড়া নেগেটিভ মার্কও থাকছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মানহানি ও দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘নেগেটিভ মার্কিং বাদ দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রশাসনের সিদ্ধান্তের আমরা প্রতিবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোনো ছেলেখেলা নয়। গত বছর স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নেওয়া আমাদের স্বকীয়তা ফিরিয়ে এনেছিল, কিন্তু এবার রিটেন বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এমসিকিউ ও নেগেটিভ মার্কিং না রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমাবে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করুন, নইলে জবিয়ানরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।’
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়কে সংকটে রেখে আমি চলে যাব না: ড. নিয়াজ আহমেদ খান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কাজী আহাদ বলেন, ‘যদি আন্দাজে এমসিকিউ দাগিয়ে বা কোনো ধরনের বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তি ছাড়াই কেউ ভর্তি হতে পারে, তবে ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজন কী? তখন সরাসরি জিপিএ ভিত্তিতে ভর্তি নিলেই চলে।’
আরেক শিক্ষার্থী রাশেদ রানা বলেন, ‘লিখিত ও নেগেটিভ মার্ক দুই-ই রাখতে হবে, নইলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামব।’
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আবেদনপত্রে বলা হয়, ‘শুধু এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া একটি অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এতে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হতে পারে এবং ভর্তি প্রক্রিয়ার মান ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা গতবছরের মতো লিখিত প্রশ্নপত্র অন্তর্ভুক্ত করা কিংবা বিকল্পভাবে নেগেটিভ মার্কিং পুনরায় চালুর দাবি জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব করার লক্ষ্যেই ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লিখিত না রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তবে ভর্তি পরিক্ষায় নেগেটিভ মার্কের বিষয়ে এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
পরীক্ষার মান বণ্টন অনুযায়ী মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে এমসিকিউ ৭২, এইচএসসি/সমমানের জিপিএ ১৮ এবং এসএসসি/সমমানের জিপিএ ১০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। প্রতি অনুষদে তিনটি বিষয়ে এমসিকিউ নেওয়া হবে। ভর্তি আবেদন শুরু হবে ২০ নভেম্বর এবং চলবে ০৩ ডিসেম্বর রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত। আবেদন ফি ইউনিট এ, বি, সি, ডি-এর জন্য ১,০০০ টাকা এবং ই ইউনিটের জন্য ১,২০০ টাকা। আবেদন করা যাবে admission.jnu.ac.bd-এর মাধ্যমে।