জাতীয়তাবাদী শক্তির পেছনে দাঁড়াতে ‘আওয়ামী লীগের ভাইদের’ আহ্বান হারুনের
- ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১৫
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পেছনে দাঁড়াতে ‘আওয়ামী লীগের ভাইদের’ প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ। একই সাথে জামায়াতে ইসলামী ভোটের জন্য হিন্দু সম্মেলন করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। মুসলমান ভোটারদের সাবধানও করেছেন যেন তারা জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়া পিআর পদ্ধতিতে দেশে ইসলামী আইন-কানুন চালু হবে কিনা-এমন প্রশ্নও করেছেন তিনি।
ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও পদ্মা নদীর ন্যায্য পানিবণ্টনের দাবিতে বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে রহনপুর আহম্মদী বেগম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। হারুনুর রশীদ এবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। এর আগে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে ‘শয়তান তাড়ানোর স্লোগান’ হিসেবে ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেন হারুন। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা আমার, আগামী জাতীয় নির্বাচন বহুদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি। শুধুমাত্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে। এই নির্বাচনের দাবি আমরা আদায় করার জন্য আমাদের অনেক সহযোদ্ধারা-সহকর্মীরা গুমের শিকার হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন। আমরা আমাদের দাবিতে অটল ছিলাম। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন। আর যারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাজিল হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে কোথাও আমি আওয়ামী লীগ করি- এই পরিচয় দিয়ে রাস্তায় ঘোরার মত আর কোন মুখ নাই। আমি আওয়ামী লীগের ভাইদেরকে আহ্বান জানাব, আপনাদের মধ্যেও যারা ভাল মানুষ রয়েছেন, যারা দেশকে ভালোবাসেন, যারা মনে করেন দেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করা দরকার, দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া দরকার, যারা বিগত সময় গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার চান, আমি আহ্বান জানাব আগামী নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পিছনে আপনারা দাঁড়াবেন।’
সাবেক এমপি হারুন বলেন, ‘আমাদের পার্টির মহাসচিব বলেছেন, আমিও বলেছি যে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর কোন অন্যায় জুলুম মিথ্যা মামলা হতে দেব না। হতেও নাই। আমাদের উপর যে অন্যায় জুলুম হয়েছে এর প্রতিশোধ আমরা নেই নাই, আমরা প্রতিহিংসার বশবর্তী হই নাই। যারা অপরাধ করেছেন, যারা সরকারি সম্পদ লুটপাট করেছেন, যারা ভোট চুরি করেছেন তারা বিচারের আওতায় আসবে। শেখ হাসিনা অন্যায় করেছে। শেখ হাসিনা এই গত ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে চলে যাওয়ার সময় যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য যারা ছিলেন, যারা বিনা ভোটে এমপিগিরি করেছেন, অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা সরাসরি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হত্যা করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছিলেন, এদেশের মা বোনদেরকে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। সুতরাং অল্প পানির মাছ লাফায় বেশি। বেশি লম্ফন করিয়েন না। বাংলাদেশে অতীতে নির্বাচন হয়েছে, আমাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছেন। জোটবদ্ধ হয়ে কয়টি আসন নির্বাচন জিতেছেন সেটি আপনারা ভালো জানেন। বিএনপির বিরোধিতা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে যখন জোট করেছেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়েছেন, আসন তিনটায় নেমে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আপনাদের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট বক্তব্য, কখন বলছেন পিআর চাই। পিআর দিয়ে কি দেশে ইসলামী আইন-কানুন চালু হবে? কখন বলছেন গণভোট না হলে আপনারা নির্বাচন হতে দেবেন না। নির্বাচনকে আজকে বিলম্বিত করা, বিঘ্নিত করার ষড়যন্ত্র যারা করছেন, তারা আগামী দিনে জাতির কাছে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবেন, যেমন চিহ্নিত হয়েছেন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসাবে। আজকে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যারা বিপক্ষে দাঁড়াবেন, তারাই জাতির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’
জামায়াত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভোট টানতে চাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজকে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশে এই ৫ আগস্টের পর তাফসির মাহফিলকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছেন। আপনারা আজকে একদিকে মন্দিরেও যাচ্ছেন, আরেক দিকে মসজিদেও যাচ্ছেন। যেহেতু আপনারা নিজেদেরকে ইসলামী দল হিসেবে দাবি করছেন, আল্লাহ পাক কোরআনে বলেছেন- দ্বীন হিসেবে একমাত্র ইসলামকে আমি নির্ধারণ করলাম। সুতরাং আল্লাহ পাক কোরআনে স্পষ্টভাবে বলছেন, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ কর, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না, শয়তান তোমাদের প্রত্যক্ষ শত্রু। আর আপনি মন্দিরে গিয়ে বলবেন, পূজা-রোজা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। অথচ পূজা হচ্ছে শয়তানের ইবাদত। আর রোজা হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। এটিকে কখনো তুলনা করা যাবে না। যারা করবেন তারা কাফের। আপনি বলছেন বিষ্ণু, কৃষ্ণ, মোহাম্মদ, ঈসা, মুসা তারা ন্যায় ও সত্যের প্রতীক। নবী রাসূলদের সাথে তাদের তুলনা করছে। নাউজুবিল্লাহ। এটা বলা যাবে? না।’
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আজকে একটা ভোটের জন্যে আপনার হিন্দু সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। হিন্দু সম্মেলনে গিয়ে হিন্দুরা স্লোগান দিচ্ছে- হরি হরি হরিবোল, দাড়িপাল্লা টেনে তোল। বলেন তো ভাইয়েরা, আপনারা আজকে মুসলমানদের ভোট চান। খুব সাবধান। আমি নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুরের সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানাব- এদের ব্যাপারে আপনারা সজাগ এবং সাবধান থাকবেন। এরা ধর্মকে ব্যবহার করে, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের নেতা, যিনি বাংলাদেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংশোধন করে গেছেন, যিনি বাংলাদেশের সংবিধানে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সৃষ্টি করে গেছেন। আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে নিয়েছেন।’
গণসমাবেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা ,সাবেক এমপি মো. আমিনুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আশাদুল্লাহ আহমদ, তসিকুল ইসলাম, আলিনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোহাম্মদ মাসুম, বাংগাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম।