তারেক রহমান
অন্তর্বর্তী সরকারকে হুমকি না দিয়ে জনগণের মুখোমুখি হোন
- টিডিসি রিপোর্ট
- ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৪৫
দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি না দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে জনগণের মুখোমুখি হোন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এটি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট ফাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফ্যাসিবাদীদের ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর: ৫০ বছর পূর্তি উপলেক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জনগণের মুখোমুখী হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদেরবাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠি রয়েছেন। এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয়জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিলো অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন। কিন্তু এইসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠির নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল?
আরও পড়ুন : ‘লীগ ধর, জেলে ভর’ স্লোগানে উত্তাল ঢাকা
তিনি বলেন, এটি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট ফাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফ্যাসিবাদীদের ছাতার নীচে আশ্রয় নেয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গণভোটের আড়ালে পতিত পরাজিত পলাতক অপশক্তিকে রাষ্ট্র রাজনীতিতে পূণর্বাসনের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে কিনা আমি এ ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহবান জানাই। স্বল্প মেয়াদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণ সকল ক্ষেত্রে সার্বিক সফলতা আশা করেনা। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বও নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করবে? নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ফেব্রুয়ারীর জাতীয়ও নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার দেবে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু মিত্র চিহ্নিত করার দিন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে আমার একটি উক্তি মনে আসে উক্তিটি হচ্ছে- 'অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে এক চোখ অন্ধ, অতীতকে ভুলে গেলে দু'চোখই অন্ধ'। সুতরাং আমাদেরকে যেমন সব সময় ইতিহাস চর্চায় থাকার দরকার নেই অপরদিকে ভবিষ্যতের পথ চলায় ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করাও কিন্তু আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল।
তারেক রহমান বলেন, যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে চেয়েছিলো, যারা জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারহরণ করে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল, যারা দেশের শৌর্য বীর্য সাহস এবং সম্মানের প্রতীক সেনাবাহিনীর গৌরবকে ভুলুন্ঠিত করতে চেয়েছিলো, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই দিনে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের পরাজয় ঘটেছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি পরবর্তীতে পুনরায় মহাজোটের নামে একজোট হয়ে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বিডিআর পিলখানায় পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখতে চেয়েছিলো, জনগণের ভোটের অধিকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর জনতার গণ অভ্যুত্থানে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। বিএনপি মনে করে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ২০২৪ ছিল দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।
সুতরাং ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে দেশ এবং জনগণের অধিকার হরণ করতে না পারে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এটিই হোক আমাদের এবারের ৭ নভেম্বরের প্রধান অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-ভৌগোলিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে চাই তাহলে আমাদেরকে ৭ নভেম্বরের মতো সিপাহী জনতার বিপ্লবের চেতনা মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে।