প্রয়াত সহযোগী অধ্যাপক মো. ইফতেখার মাহমুদ স্মরণে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

প্রয়াত সহযোগী অধ্যাপক মো. ইফতেখার মাহমুদ স্মরণ অনুষ্ঠানে
প্রয়াত সহযোগী অধ্যাপক মো. ইফতেখার মাহমুদ স্মরণ অনুষ্ঠানে © সংগৃহীত

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে গতকাল আইন বিভাগের প্রয়াত সহযোগী অধ্যাপক মো. ইফতেখার মাহমুদ স্মরণে এক শোকসভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকর্মী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে এ আয়োজন হয়ে ওঠে এক আবেগঘন স্মরণ অনুষ্ঠান।

তাঁর প্রয়াণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিটি স্তরে অনুভূত হচ্ছে গভীর শূন্যতা। তিনি শুধু একজন শিক্ষকই নন — ছিলেন জ্ঞানের আলো ছড়ানো এক আলোকবর্তিকা। ছাত্র–ছাত্রীদের প্রতি তাঁর মানবিক আচরণ, শান্তশিষ্ট স্বভাব এবং অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা তাঁকে এনে দিয়েছিল সকলের অকৃত্রিম ভালোবাসা। পাশাপাশি তিনি ছিলেন লেখক, জীবন ও দর্শনের গভীরতা নিয়ে লিখেছেন সাতটি গ্রন্থ — যা পাঠক সমাজে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছে একজন মননশীল এবং চিন্তাশীল গবেষক-লেখক হিসেবে। ৩০ অক্টোবর ২০২৫ দিনটি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় শোকের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী। তিনি বলেন, ফুলের সুগন্ধি যেমন ফুলের পাপড়ির ভেতর লুকায়িত, ঠিক তেমনি ইফতেখার মাহমুদ তার কথার মাঝে সাহিত্য কর্মে লুকায়িত। তিনি মৃত্যুবরণ করে দেখিয়ে গিয়েছেন কিভাবে সবার মাঝে বেঁচে থাকতে হয়। উপাচার্য মহোদয় প্রয়াত শিক্ষকের পেশাগত অবদান, মানবিক চরিত্র ও একাডেমিক নিষ্ঠার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার প্রফেসর মো. শামসুল হুদা, রেজিস্ট্রার ড. আবুল বাশার খান, আইন অনুষদের ডিন এ.বি.এম. ইমদাদুল হক খান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মাহফুজুর রহমান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম. ছায়েদুর রহমান, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রফিউসসান এবং ড. মো. জহুরুল হক, আইন অনুষদের সাবেক ডিন এবং চেয়ার। তাঁরা প্রয়াত শিক্ষকের প্রজ্ঞা, নেতৃত্ব এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান তুলে ধরেন।

প্রয়াত ইফতেখার মাহমুদের সাবেক সহকর্মীদের মাঝে স্মৃতিচারণ এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি তুলে ধরেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রথম চেয়ারপার্সন ইশরাত আজীম আহমাদ, সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল আওয়াল খান (বর্তমান অধ্যাপক, আইইউবি), সাবেক সহকারী অধ্যাপক, রেহনুমা বিনতে মামুন (ফ্যাকাল্টি অব ল, আইইউবি), এবং গোলাম সারওয়ার, সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাবি। তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু লে. কর্নেল নাজমুল হক এবং মুনাওয়ার হোসেনও তাদের স্মৃতিচারণে আবেগ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত ছিল তাঁর একমাত্র কন্যা মনীষা তাইফের বক্তব্য। বাবার স্মৃতি, তাঁর ভাবনার শক্তি এবং শব্দের সৌন্দর্য—মনীষার কণ্ঠে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। তাঁর স্ত্রী তানিয়া নাসরীনও পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাভরে স্মৃতিচারণ করেন।

ইফতেখার মাহমুদ ছিলেন ধীমান, নীরব, মূল্যবোধে দৃঢ় এবং আলোকিত এক মানুষ। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে তাঁর শিক্ষাজীবনের পথচলা শুরু। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে তিনি আলো ছড়িয়ে গেছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবনে। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদে তিনি ছিলেন জ্ঞান, অনুপ্রেরণা ও মানবিকতার এক মূর্ত প্রতীক। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি পরিবার এই প্রিয় শিক্ষককে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবেন।