পথ হারানো শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দিলেন ঢাবি ছাত্রদল নেতা সানজিদ
- ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পথ হারানো মো. রহমান নামে আট বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে নিরাপদে ফিরিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সানজিদ ইসলাম সাহিব। গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, ঘটনার দিন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিশু রহমানকে জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে একা বসে থাকতে দেখেন ছাত্রদল নেতা সানজিদ। শিশুটির দুর্বল অবস্থায় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি প্রথমেই তাকে পানি ও খাবার দেন এবং শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি বুঝতে পারেন শিশুটি পথ হারিয়েছে। তবে রহমান নিজের নাম বলতে পারলেও পিতা-মাতার নাম বা সঠিক ঠিকানা কিছুই জানাতে পারছিল না।
রহমান জানায়, সে গত সাত দিন ধরে টিএসসি মেট্রো স্টেশনের নিচে অবস্থান করছিল এবং সেখান থেকে হেঁটে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চলে আসে। ঠিকানা জানতে চাইলে সে শুধু ‘সূত্রাপুর’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারে।
এরপর সানজিদ রহমানকে নিয়ে টিএসসি মেট্রো স্টেশনে ফিরে যান। সেখানকার কিছু দোকানদার জানান, হারিয়ে যাওয়ার পর শিশুটি কিছু ভবঘুরের কবলে পড়ে, যারা তাকে অসাধু কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সানজিদ দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান।
তবে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, থানায় রহমানকে নিয়ে কোনো নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়নি। ফলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। পরে সানজিদ নিজ উদ্যোগে সূত্রাপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে রহমানের পরিবারের ঠিকানা সংগ্রহ করেন। অবশেষে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তিনি রহমানকে তার বাবা-মায়ের হাতে নিরাপদে তুলে দেন।
ছেলেকে ফিরে পেয়ে রহমানের মা আবেগে ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, রহমান আমার একমাত্র সন্তান। আমি তাকে মানুষ করতে চাই, কিন্তু সংসারের টানাপোড়েনে তা পারি না। সানজিদ ভাইয়ের মতো মানুষ থাকলে সমাজে আজও মানবতা বেঁচে আছে।
তিনি আরও যোগ করেন, তিনি নিশ্চয়ই একজন ভালো মায়ের সন্তান। তার জন্য আমি মন থেকে দোয়া করি।
পরবর্তীতে শিশু রহমানের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেদিন বাড়ির পাশে খেলতে খেলতে রহমান পথ হারায়। এক ব্যক্তি তাকে রমনা পার্কে যাওয়ার প্রলোভন দিয়ে শাহবাগগামী বাসে তোলে। সেখান থেকেই সে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলে আসে।
ছাত্রদল নেতা সানজিদ বলেন, ছাত্রদল সবসময় মানবিক কাজকে প্রাধান্য দেয়। এটা কোনো রাজনৈতিক কাজ নয়, এটা একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের দায়িত্ববোধ। একজন মায়ের কোল খুঁজে দিতে পারাটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।