কলা কি সামান্য কাঁচা, না কি সম্পূর্ণ পাকা অবস্থায় খেলে বেশি উপকার? 

কলা এমন একটি ফল, যা অন্যান্য ফলের তুলনায় দাম কম এবং সহজে পাওয়া যায়। এটি পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। কলা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি শরীরের নানা প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। তবে কলার পুষ্টিগুণ তার পাকার স্তরের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। প্রশ্ন হল কলা কাঁচা অবস্থায় থাকা বা হালকা সবুজ ভাব থাকা কলা মানেই ভাল আর পুরোপুরি পেকে যাওয়া কলা খাওয়া খারাপ? না কি প্রত্যেক ধরনেরই আলাদা আলাদা দোষ এবং গুণ আছে! চলুন জেনে নিই কোন অবস্থায় কলা খাওয়া উচিত। 

হালকা সবুজ ভাব থাকা কি ভাল? 
উজ্জ্বল হলুদ রং। গায়ে বড়জোর সামান্য বাদামি ছিটে দাগ। বাজারে গেলে দেখে শুনে এমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কলাই কিনে আনা হয় সচরাচর। হালকা সবুজ ভাব থাকলে দোকানি বলে দেন, এক দিন রেখে খেতে। আবার বেশি বাদামি হলে জানান ‘স্বাদে মিষ্টি হবে’। সত্যি বলতে কী, কলার রং নিয়ে এত ভাবনাচিন্তা করেননি মানুষজন। কিন্তু ইদানীং কিছু পুষ্টিবিদকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কলা হালকা কাঁচা অবস্থায় খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল! কিন্তু কেন?

এমস প্রশিক্ষিত আমেরিকা নিবাসী অন্ত্রের চিকিৎসক সৌরভ শেট্টি জানাচ্ছেন, কিছুটা কাঁচা ভাব থাকা অবস্থায় কলা খেলে তা অন্ত্রের জন্য ভাল। কারণ, তাতে রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চ থাকে বেশি। এ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ হল এক ধরনের ফাইবার, যা প্রিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে। আর প্রিবায়োটিক অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে সুস্থ রাখে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রাও খুব বেশি বাড়তে দেয় না। 

লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ প্রশিক্ষিত চিকিৎসক কর্ণ বলছেন, কাঁচা হোক বা পাকা— প্রত্যেক ধরনের কলারই আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে। কে কোনটি বাছবেন, তা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের উপর নির্ভর করবে।

কাঁচকলা
কাঁচা কলা, বা সবুজাভ রঙের কলা, বিশেষত ভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ধারণ করে। এ অবস্থায় কলার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে, যা পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া, কাঁচা কলা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, কারণ এতে থাকে প্রতিরোধক উপাদান যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। কাঁচা কলা গ্লাইকেমিক ইনডেক্সে (জিআই) কম, যার ফলে এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি। অতিরিক্ত ফাইবার পেটের পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।

হালকা সবুজাভ কলা
অল্প কাঁচা ভাব থাকা কলা স্বাদ-স্বাস্থ্য দু’দিকই বজায় রাখতে পারে। এ ধরনের কলায় ফাইবারের মাত্রা থাকে বেশি। হালকা মিষ্টি স্বাদও আসে। পাশাপাশি, এতে পটাশিয়ামও পাওয়া যায়। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

সম্পূর্ণ পাকা কলা
এতে ফাইবারের মাত্রা কিছুটা কম। এ সময় কলা আরও মিষ্টি ও রসালো হয়। হলুদ কলায় চিনি, ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণ বাড়ে। এতে পটাসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন বি৬ এবং সি থাকে, যা শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যারা শরীরচর্চা করেন, তাদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অত্যন্ত ভাল খাবার। এটি থেকে তৈরি হতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ক্যাটেশিন। যা গ্রিন টি-তে পাওয়া যায়। এতে পটাশিয়ামের মাত্রাও কিছুটা বাড়ে।

খোলা বাদামি হয়ে যাওয়া কলা
ফাইবারের মাত্রা সবচেয়ে কম। তবে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পরিমাণে সবচেয়ে এগিয়ে। এতে ক্যাটেসিন থাকে প্রচুর পরিমাণে। এ কলা বেকিংয়ের জন্য অত্যন্ত ভাল। বাড়িতে কেক বা পাউরুটি বানানো যেতে পারে এ কলা দিয়ে। যা স্বাস্থ্যকরও হবে।

কাঁচা কলার যেমন সুস্থ পাচনতন্ত্র এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তেমনি হলুদ এবং খয়েরি কলা শক্তি প্রদান করে। তাই কলার উপকারিতা গ্রহণের জন্য এটি আপনার প্রয়োজন এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে খাওয়া উচিত।