নির্বাচনের জন্য দেশের সবকিছু স্থবির হয়ে আছে: আমীর খসরু
- ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:০৭
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে দেশে নির্বাচনের জন্য বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্তও স্থগিত-স্থবির হয়ে আছে। অনির্বাচিত সরকার থাকার কারণে গত ১৪ মাসে রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানই সঠিকভাবে কাজ করছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যখন একটি সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না, তখন রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা হারায়। বর্তমানে সেই পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ- সবখানেই অদক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট।
রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের আয়োজনে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তি চায়। আর দেশের মানুষের সব সিদ্ধান্ত এখন স্থগিত। কেন স্থগিত? বলে, আমরা নির্বাচনের পরে করব। এটা বিনিয়োগ হোক, ব্যবসা-বাণিজ্য হোক, মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত আমি জানি। ভাই, নির্বাচনটা হয়ে যাক, তারপর আমরা এগুলো করব। সবকিছু স্থগিত, স্থবির। নির্বাচন নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেও একটি পক্ষ তা বিলম্বিত করতে মাঠে নেমেছে। পক্ষটি মূলত গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা বিলম্বিত করতে চায়, তারা কি গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ? বিশ্বাস করা যায়?
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংবিধানের অধীন শপথ গ্রহণ করেছে, সেই সংবিধানের অধীন গণভোটের আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের স্পিরিটের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান আছে বর্তমানে। যে সংবিধানের অধীন অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে, এ সংবিধানে গণভোটের কোনো অপশন নেই। এখন গণভোট নির্বাচনে আগে কেন, নির্বাচনের দিনও গণভোট করা এ সংবিধান গ্রহণ করবে না। গণভোট নির্বাচনের দিনে আয়োজন করার সিদ্ধান্তে বিএনপি একমত হয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছে, যাতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সহনশীল পরিস্থিতি বজায় থাকে। দেশে পরস্পরের মধ্যে সম্মানবোধ থাকে, বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়।
আমীর খসরু অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত এখন একক গোষ্ঠীর হাতে। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে যারা নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়, তারা গণতন্ত্রের শত্রু। দেশের মালিকানা আজ জনগণের হাতে নেই। অল্প কিছু লোক নিজেদের মালিক মনে করে জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করছে।
একটি পক্ষ এখনই সবকিছু পাস করতে চায় মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা বিদায়ের পরেও অগণতান্ত্রিক আচরণ রয়ে গেছে। যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে তারা গণতন্ত্র চায় না। তিনি আরও বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে দ্বিমত পোষণ করেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উদারতার পথে এসেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এখন ঐকমত্য হয়নি, এমন অনেক দাবিও উত্থাপন করা হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা আরও বলেন, একটি দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আইনের শাসন ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো অপরিহার্য। পুলিশ প্রশাসনের কাজ জনগণের সেবা করা, তাদের ওপর কর্তৃত্ব করা নয়। জনগণকে সেবক নয়, অংশীদার হিসেবে দেখতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, আমরা সংঘর্ষ চাই না, চাই সহনশীল রাজনীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। বিএনপি বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা। রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুনর্গঠনের ওপর। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে—এটাই আজকের সবচেয়ে বড় সংস্কার।
দ্য ফিন্যান্স টুডের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন আবদুল বারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।