রোজ দুপুরে ঘুম থেকে উঠলে শরীরে উপর যেসব মারাত্মক প্রভাব পড়ে
- ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯
রাত জেগে সিরিজ দেখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করা, কিংবা দেরিতে কাজ শেষ করার অভ্যাস এখন অনেকেরই। ফলে রাতের ঘুম পুষিয়ে নিতে সকালে একটু বেশি ঘুমানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ আবার দুপুর পর্যন্ত ঘুমান নিয়মিতভাবে। শুনতে আরামদায়ক মনে হলেও, বিজ্ঞান বলছে—এই অভ্যাস শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। বরং দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনার ঘুমের চক্র, মানসিক স্বাস্থ্য, এমনকি হার্টেরও ক্ষতি করতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, নিয়মিত দুপুরে ঘুম থেকে ওঠার ফলে শরীরে কী ধরনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে
শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক বিঘ্নিত হয়
মানবদেহে একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি আছে, যাকে বলা হয় সার্কাডিয়ান রিদম। এই ঘড়ি ঠিক করে দেয় কখন আপনি ঘুমাবেন, কখন জেগে উঠবেন, কখন খাবেন। আপনি যদি নিয়মিত দুপুরে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে এই প্রাকৃতিক রিদম পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়। এর ফলে- ক্লান্তি ও মাথাব্যথা, মনোযোগ কমে যাওয়া ও সারাদিন অলসভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
সূর্যালোকের অভাবে ভিটামিন ডি ঘাটতি
সকালের সূর্যালোক দেহে ভিটামিন ডি তৈরির জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি দুপুরে ঘুম থেকে ওঠেন, তবে সূর্যের সকালের আলো মিস হয়ে যায়। নিয়মিত এমন হলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এমনকি মেজাজও খিটখিটে হয়ে ওঠে।
মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব
রাত জাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপ্রেশন ও উদ্বেগের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। কারণ, ঘুমের সময়সূচি এলোমেলো হলে মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে আপনি ছোট ছোট বিষয়েও হতাশ বা উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারেন।
হজমে সমস্যা ও ওজন বৃদ্ধি
দেরিতে ঘুম থেকে ওঠলে সকালের নাশতা বাদ যায়, ফলে শরীরের মেটাবলিজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
এতে হজমে সমস্যা, গ্যাস বা এসিডিটি, অস্বাভাবিক ক্ষুধা ও ওজন বৃদ্ধি দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে দেরি করে ওঠেন, তাদের মধ্যে স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সময় অনিয়ম রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বাড়ায়। দীর্ঘ সময় এভাবে চলতে থাকলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
কর্মক্ষমতা ও মনোযোগ কমে যায়
দিনের অর্ধেক ঘুমিয়ে কেটে গেলে শরীরের প্রাকৃতিক এনার্জি লেভেল কমে যায়। ফলে পড়াশোনা, অফিস বা দৈনন্দিন কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়। এমনকি রাতে ঘুমাতেও সমস্যা হয়, যা আবার পরদিন দুপুরে ঘুমিয়ে তোলার ‘চক্রে’ পরিণত হয়।
কী করবেন?
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে ও জেগে উঠতে চেষ্টা করুন।
রাতে মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার কমান।
সকালে অল্প সময়ের জন্য হলেও সূর্যের আলোতে থাকুন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান ও হালকা ব্যায়াম করুন।
দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো অস্থায়ী স্বস্তি দিলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের দেহ সূর্যের সময় অনুযায়ী কাজ করে—তাই সকালের আলোয় ঘুম ভাঙা মানে শুধু দিন শুরু নয়, বরং শরীর ও মনের নতুন ভারসাম্য স্থাপন।