ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নবীনদের নৈতিকতা কোর্স বাধ্যতামূলক হচ্ছে, বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হলো
- ইরফান এইচ সায়েম
- ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২:০৪
দেশে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের এক ধরনের অবক্ষয় হয়েছে। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সমাজ, প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই আবার উচ্চশিক্ষিত। অপরদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
এ অবস্থায় সব শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। এজন্য আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীর জন্য ‘নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা’ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্যও কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘‘দেশে নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চার এক ধরনের অবক্ষয় হয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনৈতিকতা এবং অমানবিক মূল্যবোধের চর্চা। এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই আবার উচ্চশিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন তারা। তারা যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন সেটা বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে যখন প্রবেশ করেন, নীতি নির্ধারণের পর্যায়ে যখন তারা কাজ করতে যান তখন তাদের অনৈতিকতার চর্চার ফলে সমাজ-রাষ্ট্র প্রায় ধ্বংসের শেষ সীমানায় গিয়ে পৌঁছেছে। এখান থেকে আমাদেরকে উত্তরণ ঘটাতে হবে-অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সংক্রান্ত পৃথক দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুটির প্রথম যৌথ সভা গত রবিবার (২ নভেম্বর) কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. নূরুজ্জামান, নৈতিক উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাকিলা ইয়াসমিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের প্রভাষক মীর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন আলী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে সোমবার (৩ নভেম্বর) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশে নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চার এক ধরনের অবক্ষয় হয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনৈতিকতা এবং অমানবিক মূল্যবোধের চর্চা। এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই আবার উচ্চশিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন তারা। তারা যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন সেটা বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে যখন প্রবেশ করেন, নীতি নির্ধারণের পর্যায়ে যখন তারা কাজ করতে যান তখন তাদের অনৈতিকতার চর্চার ফলে সমাজ-রাষ্ট্র প্রায় ধ্বংসের শেষ সীমানায় গিয়ে পৌঁছেছে। আবার সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এখান থেকে আমাদেরকে উত্তরণ ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকদিন থেকে এ রাষ্ট্রের এ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তাই এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করতে চায়। আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, আমাদের সব শিক্ষার্থীদের নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন করে তুলবার জন্য একটি কোর্স চালু করতে যাচ্ছি। যেটি সকল শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বাধ্যতামূলক।
অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট থেকে এ বিষয়ে দুটি কমিটি করা হয়েছে। সে কমিটির একটি যৌথ সভা গতকালই আমরা বসেছি। সেই সভায় আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকেই আমরা এই কোর্সটি চালু করতে চাই। কোর্সটি হবে নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষাসংক্রান্ত। আমাদের একটাই লক্ষ্য সেটা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদেরকে নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধের মানদণ্ডে উচ্চ মানদণ্ডের হবে এমন গ্র্যাজুয়েট আমরা তৈরি করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা যেমন নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য লক্ষ্য রেখে এই কোর্সটা যেমন চালু করছি, একই সাথে আমাদের বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী আমাদের সাথে আছে ফার্স্ট ইয়ার থেকে ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা যেটি করতে যাচ্ছি, সেটা হচ্ছে প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে এই নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধ বিষয়ক দুদিনের কর্মশালার আয়োজন করার পরিকল্পনা করছি।