টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ-২০২৫
মোবাইলে অশোভন বার্তা পাঠালে ২ বছরের দণ্ড, বিদ্বেষ ছড়ালে ৯৯ কোটি টাকা জরিমানা
- টিডিসি রিপোর্ট
- ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৫
ফোনে অশ্লীল বা অশোভন বার্তা পাঠালে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দেড় কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ- ২০২৫’-এর খসড়ায়। বুধবার (৫ নভেম্বর) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে। অংশীজন ও সাধারণ নাগরিকদের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়াটি বিভাগের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশের ধারা ৬৯ অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ বা বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে অশ্লীল, ভীতিকর, অপমানজনক বা অশোভন কোনো বার্তা, ছবি বা ভিডিও পাঠালে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। এছাড়া, বেআইনিভাবে আড়ি পাতলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা দেড় কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশের ধারা ৭০ অনুযায়ী, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কাউকে বারবার ফোন করে বিরক্ত করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য দোষী ব্যক্তি অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
অধ্যাদেশের ধারা ৬৯ (ক)-এ আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে অশ্লীল, অপমানকর, হুমকিমূলক বা ভয়ভীতিকর বার্তা প্রেরণ করেন, তবে প্রেরণকারী অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
খসড়া অনুযায়ী, ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা যেমন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন মেসেজিং ও ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ—সবই সরকারের অনুমোদনের আওতায় আসবে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে নিবন্ধন নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
অধ্যাদেশের ধারা ৬৬ (ক)-এ বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতি ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করে, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধে অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৯৯ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন অপরাধী।
এ ধারায় আরও বলা হয়েছে, যদি কেউ দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করে কিংবা কৌশলগত ফাইবার নেটওয়ার্ক, ডেটা সেন্টার বা সার্ভার সিস্টেম ব্যাহত করে, তাহলেও একই দণ্ড প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া কোনো টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী কমিশনের নির্দেশ অমান্য করলে, প্রতিষ্ঠানটি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৯৯ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার প্রয়োজনে সরকার যেকোনো প্ল্যাটফর্ম স্থগিত বা বন্ধ করতে পারবে।
এ খাতে গঠিত কমিশনের নাম হবে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিশন’, যা হবে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাঁচ সদস্যের এই কমিশনের একজন হবেন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান। কমিশনটি লাইসেন্স প্রদান, নীতিনির্ধারণ, স্পেকট্রাম বণ্টন ও প্রযুক্তিগত মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে।
অধ্যাদেশের বিষয়ে মতামত পাঠানো যাবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ই-মেইলে secretary@ptd.gov.bd (mailto:secretary@ptd.gov.bd) অথবা ডাকযোগে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ঠিকানায়।