শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে স্কুল থেকে পালালেন বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক

প্রধান শিক্ষক শাদাত হোসেন শামীম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
প্রধান শিক্ষক শাদাত হোসেন শামীম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা © সংগৃহীত

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় দীর্ঘদিন বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পালিয়ে যান। বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে এই ঘটনা, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাদাত হোসেন শামীম ও সহকারী শিক্ষিকা রিফাত আরার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের বেশ কিছু ভিডিও ২০২৩ সালের ৫ই জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড শিক্ষক অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শামীমকে বরখাস্ত স্থায়ী বরখাস্তের জন্য সুপারিশ করেন। এরপর তিনি উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত তাকে স্বপদে বহাল করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে শাদাত হোসেন শামীম তার গ্রামের কিছু লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্লোগান দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে প্রধান শিক্ষক শামীমের সঙ্গীদের সাথে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি শুরু হয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় সুযোগ বুঝে প্রধান শিক্ষক দ্রুত বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। 

এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দাবি করছেন, শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা রক্ষায় দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হোক। 

প্রধান শিক্ষক শাদাত হোসেন শামীম বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অন্যায়ভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। আমি হাইকোর্টে মামলা করলে আদালত আমার পক্ষে রায় দেন এবং বকেয়া বেতনসহ পদে যোগদানের নির্দেশ দেন। সেই রায়ের কাগজ উপজেলা নির্বাহী অফিস ও থানায় জমা দিয়েছি। বিদ্যালয়ে গেলে কিছু শিক্ষকের ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা আমার উপর হামলা চালায়। আমি আত্মরক্ষার জন্য বিদ্যালয় ত্যাগ করি।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, হাইকোর্টের যে রায় দেখানো হয়েছে, সেটি ভুয়া বলে আমরা সন্দেহ করছি। আজ সে গ্রামের কিছু লোক নিয়ে জোর করে প্রতিষ্ঠানে ঢোকার চেষ্টা করে এবং শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাকে বিদ্যালয়ে ফিরতে দেব না।

একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষক সমাজের আদর্শ মানুষ। তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ মানা যায় না। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এতো বড় ঘটনার পর সে কীভাবে আবার বিদ্যালয়ে আসতে পারে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম বলেন, আমি বর্তমানে ছুটিতে ঢাকায় আছি। কোনো চিঠি এসেছে কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নই।

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাইকোর্টের রায় সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রধান শিক্ষক আমাকে দেখিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি বলেন, ঘটনার বিস্তারিত এখনো পাইনি। তবে হাইকোর্টের রায়ের কথা শুনেছি। ট্রেনিং শেষে এসে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।