সরকারি হওয়া স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেসরকারি, বাড়ছে উৎকণ্ঠা

কয়েকবছরে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ জাতীয়করণ কলেজের সংখ্যা ২৯৯টি। এছাড়া ৩২৫টি স্কুল জাতীয়করণ করা হয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি হলেও বেসরকারি রয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফলে তাদের মধ্যে উৎকন্ঠা ক্রমেই বাড়ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সরকারিকরণের জন্য সর্বশেষ কলেজ তালিকাভুক্ত করা হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। আর সরকারিকরণের আদেশ জারি হয় গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। তিন ধাপে মোট ২৯৯টি কলেজের সরকারি করার আদেশ জারি হয়। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্মীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, এরইমধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। অনেকের চাকরি শেষ পর্যায়ে থাকায় অন্যদের মধ্যেও শঙ্কা বাড়ছে। এরমধ্যে জাতীয়করণ করা কলেজের ১২ হাজার শিক্ষক এবং স্কুলের প্রায় আট হাজার শিক্ষক নিজেদের পেশাজীবন নিয়ে রয়েছেন উত্কণ্ঠায়। এমনকি সুবিধাবঞ্চিত হয়েই অবসরে চলে যেতে হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, জনবল সরকারিকরণের কাজ খুবই ধীরগতিতে হওয়ায় সব কলেজের কাজ শেষ করতে তিন থেকে চার বছর লেগে যাবে। ফলে এই সময়ে আরো অনেক শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। এতে যেমন তারা সরকারি সুবিধাবঞ্চিত হবেন, অন্যদিকে শিক্ষক সংকট তৈরি হবে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হবে। এজন্য দ্রুত সরকারিকরণের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কলেজগুলোর সংখ্যাতাত্ত্বিক পদসৃষ্টির প্রস্তাবনা পাঠানো হলে জনপ্রশাসন একই সঙ্গে জনবলের সকল কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সে আলোকে মাউশি থেকে কলেজগুলোর কাছে নতুন করে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। এই তথ্যের সঙ্গে আগের তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন তথ্য যোগ করা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই চলছে।

এ ব্যাপারে আত্মীকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল হক বলেন, ‘সরকারিকরণের প্রস্তুতি তিন বছর ধরে চললেও তা এখনো শেষ হয়নি। প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়েছে তা-ও সাত মাস হয়ে গেছে। অথচ শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনো বেসরকারিই রয়ে গেছেন।

জানা গেছে, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন প্রক্রিয়ায় দ্রুত সরকারি করা যায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সময় লেগে যায়। পুরনো পদ্ধতিতে সরকারিকৃত ২৯৯ কলেজের পদ সৃজন করতে আগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এতে অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি হওয়ার সুবিধাবঞ্চিত থেকেই অবসরে চলে যাবেন। এজন্য দ্রুত পদ সৃজন করতে নানামুখী চিন্তাভাবনা চলে।

এজন্য সব কলেজে সমন্বিত পদ সৃজন করার অংশ হিসাবে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে সভা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীকরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত এবং দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের ১৫ দফা তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব বা অতিরিক্ত সচিবের প্রত্যায়নসহ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাউশি সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের কলেজ শাখায় এই কাজের জন্য মাত্র তিনজন সহকারী পরিচালক রয়েছেন। তবে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আরো ৯ জন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাত্র ১০টি কলেজের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।

শাখা থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসের ১৫ এবং ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘সরকারিকরণের জন্য আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি, বাড়তি জনবলও সংযুক্ত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সব কলেজের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অপরদিকে স্কুলের জনবল সরকারিকরণের প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব লুত্ফুন নাহার জানান, ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮ স্কুলের জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ৮১টি স্কুলের জনবলের ফাইল সংশ্লিষ্ট শাখা ও মন্ত্রণালয়ে চলমান রয়েছে। এগুলো দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্কুলের জনবল সরকারিকরণের কাজও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি একটি, ২৫ নভেম্বর তিনটি, ১৮ নভেম্বর চারটি, ১৫ নভেম্বর ১৬টি, ১২ নভেম্বর চারটি, ২৯ অক্টোবর চারটি, ১১ অক্টোবর ১৯টি, ৯ অক্টোবর ১৩টি, ২৮ সেপ্টেম্বর ২৫টি, ২৪ সেপ্টেম্বর ৪৩টি, ১৩ সেপ্টেম্বর ৪৪টি এবং ১৬ সেপ্টেম্বর একটিসহ মোট ৩২৫টি স্কুলের সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়।