বাকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় © সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রকাশের পরপরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সার্বিক বিষয় নিয়ে আগামীকাল (৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তিনখোলা হলে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ বলছেন পদ-পদবির যোজন-বিয়োজন নিয়ে, আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন কার্যপরিধির সীমাবদ্ধতা নিয়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যখন বাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, ঠিক তখনই গঠনতন্ত্রের নানা দিক নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—প্রকাশিত গঠনতন্ত্রে শিক্ষার্থীদের পূর্ণ মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, প্রশাসন তাদের মনমতোভাবে ববি ছাত্র সংসদকে একটি সামাজিক সংগঠনে রূপ দিতে চায়। কার্যপরিধি নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা, নির্বাচন কবে নাগাদ হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা রোডম্যাপ নেই। পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ যুক্ত করা হয়নি যা শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়নে বাধা হতে পারে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। যেমন আইনবিষয়ক সম্পাদক পদটি রাখা হয়নি। এ ছাড়া ও ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক বা ছাত্র কল্যাণ সম্পাদকও নেই, যা অন্য অনেক স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদটিও রাখা উচিত ছিল। আমাদের মেডিকেল সেন্টারের বর্তমান অবস্থায় নাপা ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। সুতরাং এই পদটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবির নেতা মোকাব্বেল শেখ বলেন, প্রশাসন পাঁচ অধ্যায় ও ৩২ ধারার সমন্বয়ে গঠনতন্ত্র প্রকাশ করেছে, তবে তাতে শিক্ষার্থীদের মতামতের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব সংকট, যেমন ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের নিম্নমান, পরিবহন সংকট, ক্লাসরুম ও হল সংকট—এসব বিষয়ের সমাধানে আলাদা সম্পাদকীয় পদ থাকা উচিত ছিল।

ববি শাখা ছাত্রদল নেতা ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এই সংসদটি কি সত্যিকারের ছাত্র সংসদ হবে, নাকি কেবল সামাজিক সংগঠন হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে? এটি নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ওপর। ভিসি স্যার ৫ নভেম্বর সব সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করেছেন, আমরা সেই আলোচনার অপেক্ষায় আছি।’

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্তে এই গঠনতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচনের আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। প্রকাশিত সংবিধিতে কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে না।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, গঠনতন্ত্র প্রকাশের পর থেকেই নানা তর্কবিতর্ক চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ নভেম্বর আলোচনার সভা হবে। গঠনতন্ত্র নিয়ে যেসব প্রশ্ন বা দ্বিধা আছে, তা সমষ্টিগতভাবে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত।

গঠনতন্ত্র প্রকাশের মাধ্যমে বাকসু নির্বাচনের পথে এক ধাপ এগিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে।