কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াবে যে ৫ প্রাকৃতিক পানীয়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি © টিডিসি ফটো

কিডনি আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে শরীরকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। বয়স বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদির কারণে আমাদের কিডনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে এর কার্যকারিতা কমে যায়। সময়ের সাথে সাথে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। কিডনি সুস্থ রাখার কথা বলতে আমরা প্রায়শই বেশি করে পানি পান করার কথা শুনে থাকি। এটি নিঃসন্দেহে কার্যকরী, তবে পানি ছাড়াও আরও কিছু প্রাকৃতিক পানীয় রয়েছে যা প্রাথমিক অবস্থাতেই কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

চলুন জেনে নিই সেই পাঁচটি পানীয় সম্পর্কে-

আদা-পুদিনা চা: আদা ও পুদিনা একসাথে ফুটিয়ে চা তৈরি করা যায়, যা হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি মূত্রনালীর স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। আদায় থাকা জিঞ্জেরল ও অন্যান্য সক্রিয় যৌগ প্রদাহ-বিরোধী হিসাবে কাজ করে, কিডনির ফোলা ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, পুদিনা মূত্রনালীর জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। এই মিশ্রণটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (যা কিডনি রোগের একটি প্রধান কারণ) কমায় এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা কিডনির সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যাবশ্যক। এতে এক ফালি লেবু যোগ করলে ভিটামিন সি ও অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিলবে, যা এই পানীয়টিকে আরও স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলে। 

গ্রিন টি: গ্রিন টি পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা কিডনির কোষগুলোর জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক আস্তরণের মতো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণের কারণে কিডনির ছাঁকনের ক্ষমতা (ফিল্ট্রেশন রেট) বাড়ে। একটি গবেষণায় গ্রিন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইজিসিজি -কে কিডনিকে গ্লুকোজ-প্ররোচিত ক্ষতি থেকে রক্ষাকারী হিসেবে 'কার্যকর' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিয়মিত গ্রিন টি পান করা নিরাপদ। এতে থাকা অল্প পরিমাণ ক্যাফেইন কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়েই শক্তির মাত্রা বাড়াতে পারে। তবে এর সেবন পরিমিতিতে রাখা জরুরি।

ত্রিফলা: ত্রিফলা একটি আয়ুর্বেদিক সূত্র, যা তিনটি ফল – আমলকী, হরীতকী ও বিভীতকীর সমন্বয়ে তৈরি। শতাব্দী ধরে এটিকে কিডনি শুদ্ধকারী টনিক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়, যা শরীরের খনিজ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে বলে পরিচিত। আধুনিক গবেষণাও এই ঐতিহ্যবাহী দাবিকে সমর্থন করে: এই মিশ্রণটি ভিটামিন সি এবং গ্যালিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে টিস্যুকে সুরক্ষা দেয়। কিডনির বাইরেও, ত্রিফলা মেটাবলিজম উন্নত করে, হজমে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে – যা সবই কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। 

তাজা সেলেরি (ধনিয়া) জুস: সেলেরি বা ধনিয়া একটি মূত্রবর্ধক (ডিয়্যুরেটিক) হিসেবে কাজ করে এবং এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কিডনিকে পরিষ্কার করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, প্রতিদিন এক গ্লাস সেলেরির রস স্ফটিক জমা হওয়া সীমিত করে কিডনিতে পাথর হওয়া রোধ করতে পারে। 'জার্নাল পিএমআইপিএ'-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্ট করে যে, সেলেরি নির্যাস অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রোটিনিউরিয়া (প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন) কমিয়ে কিডনির স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। উপকারিতা পেতে, কয়েকটি সেলেরির ডাঁটা পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন, তারপর ছেঁকে নিন এবং খালি পেটে পান করুন। এর সতেজ ও ঝরঝরে স্বাদ আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে, যা কিডনির জন্য অত্যাবশ্যক।

ড্যান্ডেলিয়ন রুটটি (ধুলাখেলা চা): ড্যান্ডেলিয়ন রুট টি একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ও বিষাক্ত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমিয়ে কিডনি এবং লিভার উভয়ের কার্যকারিতাকেই সমর্থন করে। 'নিউট্রিয়েন্টস' জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ড্যান্ডেলিয়ন পাতার নির্যাস তার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণের কারণে কিডনির কোষগুলিকে সুরক্ষা দেয়। এটি নিয়মিত পান করলে শরীরে পানি জমা কমতে পারে এবং মূত্রের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা সময়ের সাথে সাথে কিডনিকে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে সাহায্য করে। 

প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য লেখা। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ দিবেন। [সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া]