ঐকমত্য কমিশনের আপত্তি থাকলেও নির্বাচনই অগ্রাধিকার বিএনপির

বিএনপির লোগো
বিএনপির লোগো © সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বা প্রতিবেদন নিয়ে দলীয়ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সংসদ নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে সফলের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি কৌশলে এগোচ্ছে। কারণ দলটির এ মুহূর্তে একমাত্র অগ্রাধিকার হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। বিএনপি পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখালে এর জের ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে বা নির্বাচন বিরোধীরা এর সুযোগ নিতে পারে বলে এ বিষয়টিও বিএনপির হাইকমান্ডসহ নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় আছে।

সংবিধান সংস্কারসহ ৪৮ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, তা নিয়ে বিএনপি রীতিমতো ক্ষুব্ধ হলেও কঠোর কোন অবস্থানে যাচ্ছে না দলটি। কারণ যেকোনো মূল্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেল ২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নীতিনির্ধারকগণ কমিশন জনগণ ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলেছে অভিযোগ করে আসছেন।
 
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত বৃহস্পতিবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে এবং জবরদস্তিমুলকভাবে জাতির উপরে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কার্যত সরকার জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই গণভোট বিএনপি মেনে নেবে না।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের শত্রুরা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে : মির্জা ফখরুল

কমিশনের রিপোর্ট বিএনপি প্রত্যাখ্যান করছে কি না, জানতে চাইলে সাংবাদিকেদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বে যেতে চাই না। আমরা চাই দেশে দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচন হোক।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে দল ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা আখ্যায়িত করলেও এর বিরুদ্ধে দলটি শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারছেনা কারণ নির্বাচন যেন ঘোষিত সময়েই হতে পারে সেই বিষয়টি চিন্তা করে। দলটির ধারণা, বিএনপি শক্ত অবস্থান নিলেওই তাদের বিরুদ্ধে বিরোধীপক্ষ ‘সংস্কার বিরোধী’ প্রপাগাণ্ডা যেন চালাতে না পারে, সেজন্য সতর্ক অবস্থান নিয়েছে দলটি।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, বিএনপি এই মুহূর্তে শক্ত কোনো অবস্থান নিলে সেটিকে কোনো কোনো গোষ্ঠী নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণ, সরকারের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন যাতে বিলম্বিত করানো যায় সেজন্য সক্রিয় আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন যা করেছে তা বিএনপিকে নয়, পুরো জাতিকেই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। সরকারের উচিত কমিশনের সুপারিশে সংশোধনী এনে ফয়সালা করা।

আরও পড়ুন : ‘বিএনপি সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে, জামায়াত নির্বাচন পেছানোর চেষ্টায়’

বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি ও রাজনৈতিক দুশ্চিন্তা আছে যে কাদের জন্য এটা করা হলো। তবে এটা একটা সুপারিশ। সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত দেখার পর বিএনপিসহ আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। 

জানা গেছে, বিএনপির কাছে এখন সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। আবার জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ কিছু দল নির্বাচনের আগে সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যদিও তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দিয়েছে তাতে কয়েকটি বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি।

দলটির অভিযোগ, তাদের সাথে আলোচনা হয়নি এমন কিছু বিষয় সুপারিশে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের দেওয়া আপত্তিগুলোও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়নি। আবার সুপারিশে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো কোনো দল সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট চাইছে। বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার ও কমিশন জনগণ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাই তাদেরই উচিত এগুলো সংশোধন করে নির্বাচনে মনোনিবেশ করা।

বিএনপি সূত্র জানায়, এ বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই সরকারের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নেতাদের আশা, আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের নিষ্পত্তি হবে।