প্রাথমিকে নিয়োগ: ১৫ দিনের জন্য শর্ট সাজেশন

বিভিন্ন পত্রিকা মারফত জানা গেলো ‘প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮’ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৪ মে, ২০১৯। সেই হিসেবে আর বেশি দিন নেই হাতে। মাত্র ১৫দিনের মতো সময় আছে যেসব উপজেলায় ২৪ মে পরীক্ষা। তবে অন্য তারিখে যাদের পরীক্ষা হবে তারা আরেকটু বেশি সময় পাবেন। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টুকুর সঠিক ব্যবহারে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন অভিষ্ট লক্ষ্যে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কীভাবে প্রস্তুত করবেন আপনাকে তার একটি শর্ট সাজেশন্স দিচ্ছেন— গাজী মিজানুর রহমান। তিনি ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার এবং সাবেক সহকারী শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার)।

পরীক্ষার তারিখ পরে যাওয়ায় অনেকেই চিন্তিত এই ভেবে যে,  ‘এতো দিন তেমন কিছু পড়লাম না, এখন কীভাবে কী করব? আমি কীভাবে এতো অল্প ভালো প্রস্তুতি নিবো? কীভাবে পরীক্ষায় পাশ করতে পারব? আমি কি আসলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবো?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখানে বলে রাখি, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রাইমারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে আমার জানমতে সর্বোচ্চ। কেননা এই সার্কুলারে ১৩ হাজার ১০০ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিবে (আগে বলা হয়েছিল ১২ হাজার নিবে। ফাইনালি আরো ১ হাজার ১০০ বেড়েছে)! যদিও আবেদন করেছে ২৪ লাখ। সেটা ভেবে মন খারাপ করার বা ভয়ের কিছু নেই।

অনেকে আছে শুধু পরীক্ষার দেয়ার জন্য পরীক্ষা দিবে। তাই আপনি ভাবুন ১৩ হাজার নয় ১৩ জন নিলেও আমি সেই লিস্টে থাকবো ইনশাল্লাহ। তাহলে আপনার সেই মনোবল আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে।

এবার আসি এই ১৫ দিন কী কী পড়বেন। আমি মনে করি, যেহেতু সময় একদম কম তাই সব না পড়ে কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন। যেখান থেকে বেশি বেশি কিংবা বারবার প্রশ্ন আসে। এখন প্রশ্ন হলো আমি তা কীভাবে বোঝবো? উত্তর একদম সহজ— আপনি যদি প্রাইমারি সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে খেয়াল করেন। তাহলে দেখতে পাবেন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে। (আপনার হাতে এতো সময় না থাকলে শুধু ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ অ্যানালাইসিস’ বইটির সাজেশন ফলো করলেই হবে)

যেমন বাংলা ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন থাকে ১৭ থেকে ১৮ এর মতো ২০ টির মতো। বাকি ২তিনটি আসে সাহিত্য থেকে। তাই এখন বাংলা সাহিত্য না পড়ে কেবল ব্যাকরণ পড়ুন। সাহিত্য যা যা পড়েছেন। এখন আর পড়ার দরকার নেই। একান্তভাবে পড়তে চাইলে শুধু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্গিম, শরৎচন্দ্র, জহির রায়হান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও জসীমউদদীন পড়ুন।

ব্যাকরণে প্রথমে কারক-বিভক্তি ভালো করে পড়ুন, এখান থেকে ২ থেকে ৪ টি প্রশ্ন থাকে, তারপর এক কথায় প্রকাশ, সমাস এই টপিকগুলো ভালো করে পড়ুন। সাথে বাগধারা, সন্ধি, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ।

ইংলিশে গ্রামার থেকে প্রশ্ন থাকে ১৯-২০। মানে ইংলিশ লিটারেচার থেকে মাঝে মধ্য একটি প্রশ্ন থাকে। তবে ইংলিশ লিটারেচার থেকে ১টি প্রশ্নও না আসার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। তাই লিটারেচার বাদ দিন। একান্ত পড়তে হলে শুধু Shakespeare, John Milton পড়ুন কিছু।

English Grammar এ আগে Vocabulary না পড়ে থাকে নতুন করে না পড়াই উচিত। English Grammar এ বেশি জোর দিন Parts of Speech, Tense। এই ২ টপিক থেকে ৪-৫টা প্রশ্ন থাকতে পারে। তারপর Preparation, Correct Spelling, Right form o Verbs, Subject Verb Agreement. সাথে পড়ে ফেলুন Condition Voice Change ও Narration, Phrase & Idioms. আর সব বাদ দিন এখন।

উল্লেখ্য যে, English এর টপিকগুলো একদম Basic থেকে "প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis" বইয়ে দেয়া আছে। আপনি বইটি থেকে পড়লে কারো হেল্প ছাড়াই সহজেই বুঝতে পারবেন।

গণিতের জন্য বীজ গণিতের মান নির্ণয়, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদ-আসল, গড়, সংখ্যা, উৎপাদক, অনুপাত ও ভগ্নাংশ পড়ুন। সাথে লসাগু ও গসাগু, ঐকিক নিয়ম । বাকি সব বাদ দিন এখন।
এখানে বলে রাখি শতকরা, গড় ও বীজগণিতের মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে।

জ্যামিতির অংশ থেকে কেবল বিভিন্ন প্রকার কোণ, সমকোণী ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্র পড়ুন বাকি সব বাদ দিন।

সাধারণ জ্ঞান: সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ৬-দফা, মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মোঘল আমল, ইংরেজ আমল ও প্রাচীন যুগ ভালো করে পড়ুন। সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ভালো করে পড়ুন। বীরশ্রেষ্ঠগুলো ভালো করে পড়ুন। (তাঁদের জেলা, জন্ম সাল এসব পড়ে মাথা নষ্ট করবেন না কিন্তু! এইসব সংক্ষিপ্ত আকারে গুছিয়ে দেয়া আছে "প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis" বইয়ে) এই মুহূর্তে বিজ্ঞান, ICT নতুন করে আর কিছু পড়বেন না। আন্তর্জাতিক থেকে তেমন প্রশ্ন থাকে না। ২-১ টা যা থাকে কেবল জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার সদরদপ্তর কোথায়, এই জাতীয় প্রশ্ন থাকে। তাই বাকি সব বাদ দিন।

আর সাম্প্রতিক থেকে ২-৩টা প্রশ্ন থাকে। তাই সব না পড়ে কেবল আলোচিত ঘটনাগুলো পড়ুন। বাকিসব বাদ দিন। সময় না পেলে সাম্প্রতিক না পড়াই উচিত। পড়লেও কেবল পরীক্ষার ১-২ দিন আগে পড়বেন। এখন পড়লে আবার ভুলে যেতে পারেন।

বিসিএস প্রিলির প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। বিশেষ করে ৩৫তম-৪০তম। অবশ্যই সুশাসন, ভূগোল, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলা লিটারেচার, বিজ্ঞান ও আইসিটি বাদ দিয়ে। তাহলে দ্রুত শেষ করতে পারবেন। হাতে সময় না থাকলে এইসবের ব্যাখ্যা না পড়ে শুধু উত্তরগুলো পড়লেই হবে।

*আর এই মুহূর্তে প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন পড়ার দরকার নেই। এখান থেকে প্রশ্ন আসে না বললেই চলে। তবে বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন থেকে হুবহু কমন আসে অনেক প্রশ্ন; আমরা সেটা বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখেছি।

*এর পর আপনি পরীক্ষা হলে পরীক্ষার দেয়ার আগে নিজে নিজে বাসায় বসে ঘড়ির সময় মডেল টেস্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন, আপনি কত পান। মডেল টেস্ট বইটি বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে - বাংলা-২০, ইংরেজি -২০, সাধারণ-২০, গণিত-২০ এভাবে আলাদা করে দেয়া থাকলে (আমরা "Authentic Publication" থেকে প্রকাশ করতে যাচ্ছি এমন বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে করে দেয়া মডেল টেস্ট। মডেল টেস্ট বইটি কেবল পরীক্ষায় আসার মতো ৫০টি পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট সন্নিবেশ করা হয়েছে।) আপনি সহজে বোঝতে পারবেন, আপনি কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নান্বার পাচ্ছেন। যেভাবে কম নাম্বার পাবেন। পরীক্ষার আগে সেই বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়ে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন।

যদি মডেল টেস্টে ৫০-৬০ নাম্বার পান তাহলে আপনার প্রস্তুতি ধরে নিবেন ভালো। আর যদি ৬০-৭০ বা তারও বেশি পান, তাহলে ধরে নিবেন আপনার প্রস্তুতি অনেক ভালো। উল্লেখ্য যে, পরীক্ষার্থী যেহেতু ২৪ লাখ। তাই একসাথে সব জেলায় পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষা হবে শুধু এমসিকিউ এবং ভাইভা। রিটেন হবে না।

মনে রাখবেন, এই ১৫ দিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্ত্ন আসতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার; যেন পরীক্ষার হলে গেলে কনফিউস না হন।

আরেকটি কথা মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।

*সকল পরিশ্রমী, সৎ সাহসীর জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।