গলাচিপায় ব্যস্ততম সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগে লাখো মানুষ
- ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৬
দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। গলাচিপা পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছারছিনা খানকায় মাদ্রাসার সামনের পাউবোর বেড়িবাঁধ থেকে ডাকুয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড় ডাকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়ক এখন খানাখন্দে ভরা, কোথাও ইটের খোয়া, কোথাও বড় বড় গর্ত।
প্রতিদিন ডাকুয়া, চিকনিকান্দি, গোজালিয়া, কলাগাছিয়া ও বকুলবাড়িয়া এই পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ সড়কটি দিয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করেন। সড়কের এমন বেহাল অবস্থার জন্য প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে এলজিডি বলছে, প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গলাচিপা পৌর শহর থেকে ফুলখালী স্লুইসগেট, তেতুলতলা বাজার হয়ে পশ্চিমপাড় ডাকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পুরো সড়কজুড়ে ভাঙাচোরা অবস্থা। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তেতুলতলা বাজারসংলগ্ন অংশে নদীভাঙনে সড়কের একাংশ হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বহু বছর ধরে এই ব্যস্ততম সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। বর্ষাকালে খানাখন্দে পানি জমে চলাচল আরও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
হাবিবুর রহমান নামে এক পথচারীরা বলেন, রাস্তাটি এমন ভাঙা যে হাঁটতেও কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে এই দুর্দশা আরও বাড়ে। বৃষ্টিতে কাদা আর পানি জমে যায়, ফলে সড়কে প্রায়ই ঘটে দূর্ঘটনা। এমনকি আমরা গাড়িতে উঠলেও মাঝেমধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের প্রতিবছর আশ্বাস দেওয়া হয় কিন্তু বাস্তবে রাস্তাটি মেরামত করা হয়নি। এখন সুস্থ মানুষ রাস্তা দিয়ে গেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়া মতো অবস্থা হয়েছে।
ইমরান নামে এক গাড়িচালক বলেন, সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী তাই যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিদিন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যায়, ফলে যা আয় করি গাড়ি ঠিক করতেই চলে যায়। আগের মতো আয় নাই যাত্রীরা ভয়ে গাড়িতে উঠতে চায় না। আমরা এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই।
আরও পড়ুন : সেন্ট মার্টিন খুললেও যেতে পারছেন না পর্যটকরা, নেপথ্যে যা
অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকরা যেমন বিপাকে পড়েছেন। তেমনি যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। আর রোগী ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এই সড়ক যেন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে জানিয়ে মো. নিজাম নামে এক যাত্রী বলেন, আমাদের প্রতিদিন উপজেলা শহরে বিভিন্ন কাজে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা যে গাড়িতে উঠতে মন চায় না। আবার হেঁটে যাওয়ার মত অবস্থা নাই তাই বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠতে হয়। আসা যাওয়ার এই পথে শরীরের হাড় ব্যথা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জুয়েল বলেন, এই রাস্তায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার না করলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। রোগী বা গর্ভবতী নারী হাসপাতালে নিতে এম্বুলেন্স আসতে চায় না। আবার আসলেও রাস্তা দিয়ে যেতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। আমাদের কৃষি পণ্য নিয়ে সময় মতো বাজারে যেতে পারি না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রায় ছয় কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই আগামী বছর জুনের মধ্যেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা অবগত। প্রকৌশল দপ্তর থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন পেলেই সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয়দের দাবি, গলাচিপা উপজেলার অন্যতম প্রধান এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ, শিক্ষার্থী ও যানবাহন চলাচল করে। দ্রুত সংস্কার না হলে দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ আরও বাড়বে। প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগের মধ্য দিয়েই স্বস্তি ফিরবে এলাকার মানুষের জীবনে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।