জ্বালানির দাম বৃদ্ধি শুধু অর্থনীতির প্রশ্ন নয়, এটি নৈতিক ও কাঠামোগত সংকট: ড. আনোয়ার হোসেন

বক্তব্য রাখছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন
বক্তব্য রাখছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন © সংগৃহীত

জ্বালানির দাম বাড়ানোকে যদি শুধু অর্থনৈতিক সমন্বয়ের অংশ হিসেবে দেখা হয়, তাহলে মূল সংকট অনুধাবন করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোজাফফর চৌধুরী অডিটোরিয়াম কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ক্যাব যুব সংসদ-২০২৫’ এর উদ্বোধনী পর্বে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, চলমান জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কেবল অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রশ্ন নয়; বরং এটি রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতা, নৈতিক অবক্ষয় ও শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন। প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, এই মূল্যবৃদ্ধি কি কেবল ‘স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’র অংশ, নাকি এর পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সংস্কার ব্যর্থতা, দুর্নীতি? তিনি বলেন, রাষ্ট্রসংস্কার মানে কেবল প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়; বরং এটি দুর্নীতি হ্রাস, জনগণের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের মধ্যে স্বচ্ছ সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া। এই মৌলিক বিষয়গুলো আমলে না নিলে, জ্বালানিসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।

এসময় তিনি ‘ফ্রি মার্কেট ইকোনমি’ বনাম ‘সামষ্টিক কল্যাণ’ -এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, যদি রাষ্ট্রনীতি ব্যক্তিগত স্বার্থ (Individual Greed)-কে প্রাধান্য দেয়, তবে সামষ্টিক কল্যাণ (Collective Good) দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ‘এনার্জি জাস্টিস’ বা শক্তি-ন্যায়ের মতো ধারণা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ থেকে হারিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন,  বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পেছনে দুর্নীতি, অদক্ষতা কিংবা মানি লন্ডারিংয়ের মতো উপাদান জড়িত থাকতে পারে। তবে মূলত সমস্যার শিকড় রাষ্ট্রের কাঠামোগত অসঙ্গতিতে-যেখানে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। তিনি মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে ধারাবাহিক সংস্কার ব্যর্থতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতি রাষ্ট্রকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে গেছে, যেখানে ব্যক্তিগত লোভ সামষ্টিক কল্যাণের জায়গা দখল করেছে।

আলোচনার শেষভাগে আনোয়ার হোসেন বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্তগুলো কেবল অর্থনীতির বিষয় নয়, বরং রাষ্ট্রের নৈতিক দিকনির্দেশনার প্রতিফলন। ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন এমন এক সংস্কার, যা জনগণের কল্যাণকে কেন্দ্র করে নীতিনির্ধারণ করে।

দুদিন ব্যাপী আয়োজিত ক্যাব যুব সংসদ-২০২৫ এর  প্রথমদিনে ২০২৬ সালের নির্বাচিত সংসদদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবারের যুব সংসদের স্লোগান ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই।’