দেশের শিক্ষা খাতে বড় সংস্কার প্রয়োজন: ডিআইইউ উপাচার্য
- ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ২০:২০
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কিছু সফলতা থাকলেও, মান ও দক্ষতার বিষয়টি এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, তার দুর্বলতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডিআইইউ প্রতিনিধি নুর ইসলাম।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা আপনি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: শিক্ষার সুযোগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছেছে। কিন্তু মানের দিক থেকে আমরা এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাইনি। সময় এসেছে ‘পরিমাণ নয়, গুণগত শিক্ষার’ দিকে মনোযোগ দেওয়ার। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, সৃজনশীল পাঠ্যক্রম এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা এই তিনটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন না আনলে অগ্রগতি টেকসই হবে না। শিক্ষার লক্ষ্য শুধু ডিগ্রি অর্জন নয়, বাস্তব জীবনে দক্ষতা অর্জনও হওয়া উচিত।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ধারাবাহিকতার কোন স্তর সবচেয়ে দুর্বল বলে মনে করেন?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে। শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা এখানেই গড়ে ওঠার কথা, কিন্তু এখনও মুখস্থনির্ভর শিক্ষা প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তারা গবেষণায় পিছিয়ে যায়। শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যা শুধু মনে রাখতে শেখায় না, চিন্তা করতে শেখায়।
এক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অযৌক্তিক বৃদ্ধি। আসলে দেশে কতগুলো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় দরকার ছিল, তা আগে ভাবা হয়নি। এখন কেউ বলবে শিক্ষার্থী বেড়েছে, তাই প্রতিষ্ঠানও বেড়েছে। কিন্তু আসল প্রয়োজন ছিল গুণগত মান নিশ্চিত করা।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মানের পার্থক্য কোথায়?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি হলো ঐতিহ্য ও গবেষণার অভিজ্ঞতা আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আধুনিক প্রশাসন। তবে সমন্বয় কম। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হয়, তাই দ্রুত পরিবর্তন বা উদ্ভাবন করতে পারে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলকভাবে দ্রুত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে।
শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে, কিন্তু কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়নি। একটি জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিশন থাকলে দীর্ঘমেয়াদী নীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত হতো।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও কিভাবে এগিয়ে যেতে পারে?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: প্রথমত, গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তারপর শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহ দিতে হবে। ডিআইইউতে আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কে গবেষণায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি - আন্তর্জাতিক সম্মেলন, জার্নাল প্রকাশ এবং ইনোভেশন সেল চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হবে শুধু ক্লাসরুম নয়, চিন্তা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি এখনো চাকরিমুখী দক্ষতায় পিছিয়ে?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: হ্যাঁ। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ডিগ্রিকেই চূড়ান্ত সাফল্য মনে করে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনও এটিই নির্দেশ করে। আন্দোলন মূলত কোটার সিস্টেম নিয়ে শুরু হয়েছিল, যা শিক্ষার সুযোগ ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে চাওয়া। শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবী হলো, একটি স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল শিক্ষা সংস্কার কমিশন তৈরি করা হোক, যা শিক্ষার মান নির্ধারণ করবে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: শিল্পখাত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে কী করা প্রয়োজন?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্পখাতের চাহিদা বোঝা প্রয়োজন, আর শিল্পখাতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডিআইইউতে আমরা কিছু আইটি ও উৎপাদনশিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছি, যাতে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা নিতে পারে। এটি একধরনের ‘শ্রেনীকক্ষ থেকে শিল্পক্ষাত’ সংযোগ।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানের দিক থেকে কতটা এগিয়েছে?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলাম গ্রহণ করছে, যৌথ গবেষণায় যুক্ত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। তবে মানের স্থায়িত্ব বজায় রাখা জরুরি। দ্রুত বৃদ্ধি তখনই টেকসই হয়, যখন গুণগত মান বজায় থাকে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধান নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: ইউজিসি সক্রিয়, অনলাইন মনিটরিং, একাডেমিক অডিট এবং মান যাচাই করছে। কিন্তু ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তত্ত্বাবধানে মাত্র ৭ জন কর্মকর্তা আছে। এছাড়া তারা ট্যাক্স নেয়, তদারকি করে, কিন্তু গবেষণা বা শিক্ষার্থীর সুযোগে সরাসরি সহায়তা দেয় না। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপও এখনো নামের বিষয়; কার্যকর ভূমিকা এখনও নেই।