ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
- ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৯
পিরোজপুরের নাজিরপুরে পানির ওপর ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও চারা উৎপাদন করে কৃষকরা বদলে দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষির চিত্র। রাসায়নিক সার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত এই ভাসমান চাষাবাদ এখন শুধু নাজিরপুর নয়, ছড়িয়ে পড়ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়।
এ পদ্ধতিতে দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে কম বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে নাজিরপুর টু বৈঠাকাটা সড়কের পাশে 'ভাসমান সবজি চাষ পদ্ধতি' ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ পদ্ধতির চাষাবাদ দেখা যায়। তাই এ সময় পিরোজপুরের সরূপকাঠি, নাজিরপুরের দেউলবাড়ি দোবড়া, কলারদোয়ানিয়া ও বরিশালের বানারীপাড়ার বিশারকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও চাষাবাদ করতে দেখা যায়। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে শাক-সবজির চারা উৎপাদন করে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
সম্পূর্ণ পানির ওপর ভাসমান পদ্ধতির চাষাবাদের কারণে গোটা বাংলাদেশে এক নামে পরিচিতি পেয়েছে পিরোজপুরের বিলাঞ্চল। বিল এলাকা হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় এখানকার জমি পানিতে ডুবে থাকায় কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় কৃষকরা সম্মিলিত উদ্যোগে জমির পানিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া কচুরিপানা, শ্যাওলা, ফেনা, দুলালীবন দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে তার ওপর ফসল চাষে সফল হয়। বিলাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত এ চাষাবাদের সাথে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ ভাসমান বেডে রোপণ করা হয় বরবটি, মরিচ, কুমড়া, শিম, পেঁপে, করলা, গাজর, টমেটো, লাউ, ফুলকপি, শালগমসহ হরেক রকমের শাক-সবজির চারা। কৃষকেদের নৌকায় নৌকায় বেড থেকে চারা তুলতে ও বীজ রোপণ করতে দেখা যায়। পাশের বেলুয়া নদীতে ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় পাইকারী ব্যবসায়ীদের। উৎপাদিত শাকসবজির ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে বৈঠাকাটা, বিশারকান্দি ও গাওখালীতে গড়ে উঠেছে শাকসবজির চারা বিক্রির বাজার।
বিলডুমুরিয়া গ্রামের অনিমেষ মিস্ত্রী বলেন, এলাকার অধিকাংশ জমি বছরে প্রায় ছয় মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। কচুরিপানায় কৃষিজমি ও খাল-বিল পরিপূর্ণ থাকে। আগে বছরে একবার ধান চাষ করে পরিবারের অভাব মেটাতে পারতাম না। পরে ভাসমান সবজি চাষ শুরু করি। বর্তমানে এ পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপাদন করে অল্প পুজিতে বেশি লাভ হয়।
সম্ভাবনাময় এ চাষাবাদ পদ্ধতির একজন সফল উদ্যোক্তা বৈঠাকাটাঁ অঞ্চলের মিজানুর রহমান টনু। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই আমরা জমির কচুরিপানা ও শ্যাওলা তুলে পানির ওপরেই সারিবদ্ধভাবে বেড় তৈরি করি। একই প্রক্রিয়ায় বাড়িতে বীজতলায় বীজ থেকে চারা গজানোর জন্য তৈরি করা হয় দলা। এ দলায় রাখা বীজে অঙ্কুর আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তা ভাসমান বডে রোপণ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে চারার উৎপাদন খরচ একটু বেশি তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর চারার মান ভালো হচ্ছে। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এখানে চারা কিনতে আসে।’