গাইনি ক্যান্সার চিকিৎসা উন্নয়নে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সঙ্গে বিএমইউর চুক্তি স্বাক্ষর

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান © সংগৃহীত

এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন (প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা) চর্চা এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) গাইনি অনকোলজি ও ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। গাইনি ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নয়ন, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ বিনিময় কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ এবং যৌথ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে এই চুক্তি সই করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গাইনি ক্যান্সার চিকিৎসা ও প্রিসিশন অনকোলজির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে গাইনোকোলজিক্যাল অকনোলজি বিভাগ এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ম্যাসাচুয়েসটস জেনারেল হাসপাতালের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ‘ডেভেলপমেন্ট অব এভিডেন্স বেইজড প্রোটকলস ফর গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

কর্মশালায় বিজ্ঞ বক্তা হিসেবে ‘এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন: ট্রান্সফরমিং এডুকেশন, প্র্যাকটিস অ্যান্ড পলিসি’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এ ছাড়া ‘এপ্লিকেশনস অব এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন ইন গাইনোকোলিজক্যাল ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আন্নেক্যাথরিন গুডম্যান, ‘এভিডেন্স বেইজড অনকোলজি ইন অ্যাডজুভান্ট ট্রিটমেন্ট অব গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার্স: ট্রান্সলেটিং ট্রায়ালস ইনটু প্র্যাকটিস’ বিষয়ে বিএমইউর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন এবং ‘ওভারভিউ অন এভিডেন্স বেইজড ম্যানেজমেন্ট প্রটোকল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার ও বিশিষ্ট গাইনোকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সভাপতিত্ব করেন গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।

10
কর্মশালায় অতিথিরা

স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রমাণভিত্তিক প্রোটোকলের উন্নয়ন শীর্ষক এই কর্মশালায় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং পেশাদারিত্ব সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম তার উপস্থাপিত প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাসেবা চর্চা প্রেসক্রিপশনের ভিন্নতা ও চিকিৎসা ব্যয় অবশ্যই কমাবে। এ চিকিৎসাসেবা চর্চায় সর্বোত্তম গবেষণার প্রমাণ, বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন, রোগীর অধিকার বিবেচনায় নিয়ে যথার্থ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা। সঠিক তথ্য ও গবেষণার আলোকে চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যয় ও প্রেসক্রিপশনের ভিন্নতা, এমনকি রোগীর মৃত্যুহার কমানোও সম্ভব হবে। তাই রোগীদের উপকারের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাকে সকল চিকিৎসকেই ধারণ ও চর্চা করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ২০২৫ সালের জন্য ওয়ার্ল্ড এভিডেন্স-বেইজড হেলথকেয়ার ডে কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে এভিডেন্স অ্যাম্বাসেডর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এভিডেন্স অ্যাম্বাসেডর হিসেবে এই স্বীকৃতি বিএমইউর গবেষণা, চিকিৎসা উৎকর্ষতা, এবং তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবিচল অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন এবং বিএমইউ এর বর্তমান প্রশাসন এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাসেবার গুরুত্ব অপরিসীম। এই কার্যক্রমকে অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে, যেখানে একজন চিকিৎসক গবেষণালব্ধ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক রোগীর জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা যেটা হবে তা নিরূপণ করে চিকিৎসাসেবা দিবেন।

তিনি বলেন, বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের যুগে প্রিসিশন মেডিসিনও একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে একজন রোগীর জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি রোগীর জন্য সঠিক ডোজ, সঠিক সময়ে দেয়াসহ সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে ক্যান্সার চিকিৎসায় এটা অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন প্রাকটিস বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রমাণিত একটি পদ্ধতি, যা সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যথার্থ ঝুঁকি মূল্যায়ন করাসহ চিকিৎসাসেবায় গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। 

অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন বলেন, এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বিষয়ক কর্মশালা দেশে অনেক আগে থেকেই শুরু করার প্রয়োজন ছিল।  এই ধরণের কর্মশালা সকল মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগেই হওয়া উচিত। সত্যিই এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন প্রাকটিস এর চর্চা এবং এর উন্নয়ন সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার খাতের উন্নয়নের জন্যই অপরিহার্য। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা পেশা, চিকিৎসক ও রোগী সবার জন্যই একটি আলোকিত ও কার্যকর পদ্ধতি হলো এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন।

ডা. নূর-ই ফেরদৌস ও ডা. ফারজানা শারমিনের সার্বিক সহায়তায় আয়োজিত কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ডা. মেহের নিগার ও ডা. মওয়া পারভিন।