ঘন ঘন চুলে রং করালে কি বিকল হতে পারে কিডনি; যা বলছেন গবেষকেরা
- ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৪
জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যভাসের কারণে কিডনিতে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। তবে জানলে অবাক হবেন ঘন ঘন চুলে রং করলে তা থেকেও কিডনির বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। বিভিন্ন প্রসাধনিতে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে কিডনি বিকলের ঝুঁকি থাকতে পারে বলেই সতর্ক করছেন গবেষকেরা।
ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের গবেষণা বলছেন, চুলে ঘন ঘন রং করালে এবং অত্যধিক রাসায়নিক মেশানো ডাই ব্যবহার করলে তার থেকে বিপদ ঘটতে দেরি হবে না। হেয়ার ডাইয়ে থাকা কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক মাথার ত্বকে দ্রুত শোষিত হয়ে যায়। সেই সব রাসায়নিক গিয়ে মেশে রক্তে এবং সেখান থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিডনি সাধারণত শরীরের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। রক্তে মিশে থাকা দূষিত পদার্থ ছেঁকে বার করে দেয়। কিন্তু হেয়ার ডাইতে থাকা কিছু রাসায়নিক ছেঁকে বার করতে পারে না। ফলে সেগুলি রক্তে জমতে থাকে ও নানা জটিল রোগের কারণ হয়ে ওঠে।
হেয়ার ডাই থেকে কী কী রাসায়নিক ঢোকে শরীরে?
চুলে রং করানোর সময়ে এই সাবধানবাণী খেয়ালই থাকে না বেশির ভাগেরই। পছন্দমতো ডাই করানোর আগে জেনে নিন, তার থেকে কী কী বিষাক্ত রাসায়নিক অবলীলায় ঢুকে পড়তে পারে শরীরে। প্রথমত যে রাসায়নিকটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে তার নাম প্যারা-ফিনাইলিন ডায়ামিন। গাঢ় রং তৈরির জন্য এই রাসায়নিকটি মেশানো হয়। মাথার ত্বকের মাধ্যমে রক্তে ঢুকে এটি কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। পাশাপাশি, প্রপিলিন গ্লাইকল, অ্যামোনিয়া, অ্যামাইনো ফেনল-এর মতো কিছু রাসায়নিকও থাকে। থাকে কিছু ভারী ধাতু, যেমন সিসা, পারদ। এগুলি শরীরে বেশি পরিমাণে ঢুকলে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। এর থেকে শুধু কিডনি নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি হতে পারে।
হেয়ার ডাইয়ের বিকল্প কী হতে পারে?
কিডনির স্বাস্থ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোশাইটি অফ নেফ্রোলজি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনির অসুখে ভুগছেন। তার মধ্যে ক্রনিক কিডনির অসুখে ভুগছেন ১০.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ১১.৮ শতাংশ মহিলা। কিডনি শুধু শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে সাহায্য করে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ইলক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা, হরমোন নিঃসরণেও এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কাজেই কিডনি বিগড়ে গেলে সারা শরীরের ভারসাম্যই বিঘ্নিত হবে। তাই রাসায়নিক মেশানো হেয়ার ডাইয়ের বদলে চুলে রং করতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের পরামর্শই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কী কী ব্যবহার করা যেতে পারে?
১) একটি লোহার পাত্রে অরগ্যানিক হেনা পাউডার নিয়ে সেই মিশ্রণটি লিকার চা দিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। এ বার মিশ্রণটি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা রেখে দিন। আগের রাতে ভিজিয়ে রাখতে পারলে আরও ভাল। এ বার মিশ্রণটি শ্যাম্পু করা চুলে মেখে রাখুন ঘণ্টাখানেক। তার পর ধুয়ে নিলেই দেখবেন পাকা চুল অনেকটাই ঢেকে গিয়েছে।
২) আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা চুল পাকা রুখতে সাহায্য করে। তিন চামচ আমলকির পাউডার, তিন চামচ হেনা পাউডার ও এক চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট চুলে লাগিয়ে রাখুন। দু’ঘণ্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩) নারকেল তেলে কারিপাতা ফুটিয়ে নিন। এই তেল ছেঁকে নিয়ে মাথায় মালিশ করুন। জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল পাকা রুখতে দারুণ কাজ করে কারি পাতা।
সংবাদসূত্র: আনন্দবাজার