ভারতের সাতারা

বাবার ঋণের টাকায় এমবিবিএস করেছিলেন ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করা সেই চিকিৎসক

ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে চিকিৎসক
ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে চিকিৎসক © প্রতীকী ছবি

মাত্র তিন লক্ষ রুপি ঋণ নিয়ে মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন এক দরিদ্র কৃষক বাবা। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল কন্যা এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের সাতারা জেলার ফলটন উপজেলা হাসপাতালে। কিন্তু সেই কন্যা, যাকে বাবা অশেষ ত্যাগ আর ঋণের বোঝা বয়ে ডাক্তার বানিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিলেন।

তরুণী চিকিৎসকের পরিবার জানায়, মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে গিয়ে বাবা তিন লক্ষ রুপি ঋণ নিয়েছিলেন, যা এখনো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল মেয়েটিই। তার বাবা একজন সামান্য কৃষক এবং মা গৃহিণী। দারিদ্র্যের মধ্যেও মেয়ের শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে তারা কোনো ত্রুটি রাখেননি। মেয়েটিও দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এমবিবিএস পাস করার পর প্রথম চাকরি হিসেবে তিনি সাতারার ফলটন উপজেলা হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে দায়িত্ব পালনের সময়ই নানা রকম হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন এবং চাপের শিকার হন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

আরও পড়ুন: হাতের তালুতে পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করলেন নারী চিকিৎসক

তরুণী চিকিৎসকের দুই খুড়তুতো ভাই, যারা নিজেরাও চিকিৎসক, জানান—হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায়ই তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্তের দায়িত্ব দিত। এমডি (ডক্টর অব মেডিসিন) পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই তরুণী, কিন্তু তবুও হাসপাতাল তাকে এমন কাজের দায়িত্ব দিত, যা তার পেশাগত উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করত। পরিবারের অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিও মাঝে মাঝে বিভিন্ন মামলার মেডিকেল রিপোর্ট বদলানোর জন্য তরুণী চিকিৎসকের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন। এসব বিষয়ে তিনি একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চিকিৎসকের কাকা বলেন, ‘ভাইঝি শুধু এমবিবিএস নয়, এমডি করারও স্বপ্ন দেখত। কিন্তু হাসপাতালে বারবার ময়নাতদন্তের দায়িত্ব দিয়ে তাকে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা রিপোর্ট বদলানোরও চাপ দিত।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে সাতারার একটি হোটেল থেকে চিকিৎসকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি সুইসাইড নোটে তিনি পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে বারবার ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। এছাড়া বাড়িওয়ালার ছেলেকেও মানসিক নির্যাতনের জন্য দায়ী করেছেন।

সুইসাইড নোটে হাতে লেখা অবস্থায় ওই দুই অভিযুক্তের নামও উল্লেখ করেছেন তিনি। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত সাব-ইনস্পেক্টর এবং বাড়িওয়ালার পুত্রকে গ্রেপ্তার করেছে।