গণমাধ্যমকর্মী স্বর্ণময়ীকে আত্মহত্যার প্ররোচণা ও যৌন হয়রানির বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
- ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৫৪
অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসকে (২৮) আত্মহত্যার প্ররোচণা ও যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত সাংবাদিক আলতাফ শাহনেওয়াজের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন উইক্যান এ্যালায়েন্সের মারফিয়া নূরশিফা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী, গণসাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না; বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রচার ও গণমাধ্যম উপপরিষদ সদস্য ও সাংবাদিক সেবিকা দেবনাথ; বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সীমা মোসলেম ও সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
মারফিয়া নূরশিফা বলেন, অভিযুক্ত সাংবাদিক আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে ও বিভিন্ন যৌন নিপীড়নের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে যা সাংবাদিক স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে। আগের যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোর যথাযথ বিচার হলে আজ স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটত না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না বলেন, একটা সভ্য সমাজে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নারী সাংবাদিক কর্তৃক তার অফিসে বারবার জানানোর পরও ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া রীতিমত লজ্জাজনক। হাইকোর্টের নির্দেশে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কমিটি গঠনের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রচার ও গণমাধ্যম উপপরিষদ সদস্য সাংবাদিক সেবিকা দেবনাথ বলেন, কর্মস্থলে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে এখনো স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়, এই প্রবণতা দূর করতে হবে। নারী গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় এখনো সাংবাদিক নেতাদের কোনো কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখছি না।
গণসাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার বলেন, সাংবাদিক স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে করণীয় নির্বাচনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের শাহনাজ সুমী বলেন, যৌন নিপীড়নকারীকে শাস্তির মুখোমুখি করার পরিবর্তে তার প্রশ্রয়দাতাকারীরা ও সমান অপরাধী। এমন নিপীড়কের সাফাই না গেয়ে তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনের আশ্রয় গ্রহনে জোরালো আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, আমাদের সমাজে নারীরা কর্মস্থলে, পরিবারে এবং জনপরিসরে ক্রমাগত সহিংসতার শিকার হয়েই যাচ্ছে। গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সাংবাদিকরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও এসব ঘটনায় সাংবাদিক সংগঠনসমূহের ভূমিকা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। সাংবাদিকতায় নারীর অগ্রসরকে নিশ্চিত করতে হলে কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তা ও সহিংসতার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, অভিযুক্ত সাংবাদিক আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও এসকল ঘটনার কোন সুষ্ঠু বিচার হতে দেখিনি। ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হলে স্বর্ণময়ীর অকালে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটত না। তিনি এসময় মিডিয়া হাউজগুলোকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত কে আশ্রয় না দিয়ে তার শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি ঘটনার প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,আমাদের প্রায়ই নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনায় বিচারের দাবিতে সমবেত হতে হচ্ছে। দুই একটি ঘটনার বিচার হলেও বেশিরভাগ সহিংসতার ঘটনায় যুক্ত অপরাধীর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোন শাস্তি হতে দেখা যায়না। তিনি আরো বলেন বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ হতে হবে; নারীর প্রতি সংবেদনশীল আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রচার করে ঠিকই তবে গণমাধ্যম হাউজে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হতে দেখা যায়না এভাবে নিজের ঘর অন্ধকার রেখে সমাজ আলোকিত করা যায় না।
উল্লেখ্য, মানববন্ধন কর্মসূচিতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির বিভিন্ন সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিসমূহ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, পাড়া কমিটির সদস্য, কর্মকর্তা অংশ নেন।