কুবি ছাত্রদল কর্মী কর্তৃক শিক্ষার্থীকে হত্যার হুমকির অভিযোগ, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ © টিডিসি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম হৃদয়কে একই হলের ছাত্রদল কর্মী কর্তৃক হুমকির অভিযোগ উঠেছ। এ ঘটনায় র‌্যাগিং, হুমকি এবং হল প্রশাসনের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী বর্ষের শিক্ষার্থী।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীদের, "তুমি কে আমি কে, দ্বীন ইসলাম দ্বীন ইসলাম", "কুবিতে র‍্যাগিং, চলবে না, চলবে না", "দ্বীন ইসলামের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে", "কুবিতে র‍্যাগিং কেন, প্রশাসন জবাব চাই", "দত্ত হলে র‌্যাগিং কেন, প্রশাসন জবাব চাই", " র‌্যাগিংয়ের নামে সন্ত্রাসী, চলবে না, চলবে না" সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন তাওহিদুল ইসলাম জিসান (এমসিজে-১৬তম), ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম (একাউন্টিং-১৭) ও আকরাম (১৮তম আবর্তন)।

বিক্ষোভ মিছিলে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাহীম বলেন, "দ্বীন ইসলাম একজন নম্র-ভদ্র ছেলে। তার সাথে এরকম আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সে মানসিক ট্রমায় পড়ে স্ট্রোক করার ভয় পাচ্ছে। দ্বীন ইসলামের সাথে হওয়া এই নিন্দনীয় ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।"

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজীদ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে দ্বীন ইসলাম আমাকে একটি মেসেজ দিয়ে বলেছে, তাকে জুনিয়ররা হেনস্তা করেছে এবং তাকে মারতে গিয়েছিলো। এই ঘটনা নিয়ে সে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলো। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজকে আবার তাকে হুমকি দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে আমরা দেখেছি এধরণের কর্মকাণ্ড হতো। কিন্তু, ৫ আগস্টের পরে এরকম ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা যারা জড়িত আছে তাদেরকে বহিষ্কার করতে হবে নয়তো এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে পরিলক্ষিত হবে।"

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান অন্তর বলেন, "দ্বীন ইসলাম ছিলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা। কিন্তু সে এখনো হলে উঠার জন্য চেষ্টা করছে। যেখানে অন্যান্য দলের কর্মীরা অনায়াসেই হলে সিট পেয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে দ্বীন ইসলামকে ক্রমাগত মানসিক টর্চার করা হচ্ছে এবং তাকে মারতেও তেড়ে এসেছিল। এ বিষয়ে সে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে। সেই অভিযোগ কেন করলো তার জন্য আজকে আবার তাকে হুমকি দিয়ে এসেছে একটি দলের কর্মীরা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। দ্বীন ইসলামকে যারা হুমকি দিয়ে ট্রমায় ফেলেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানাই।"

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সোহান বলেন, "আমি ২০২২ সালে হলে উঠেছিলাম, তখন ছিলো স্বৈরাচারী হাসিনার আমল। এখনও কি হাসিনার আমল আছে? তাহলে কীভাবে স্বৈরাচারের দোসরা এখনো ক্ষমতায় আছে। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, হল প্রশাসনের দায়িত্বে কীভাবে এখনো থাকে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ফেসবুকে হুমকি ধমকি দিয়ে যায়। এখন তা বাস্তবে হলগুলোতে দেখা যাচ্ছে ২৪ পরবর্তী সময়ে এটা কি আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম তাহলে প্রশাসন কেন র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অবস্থান নিতে পারলো না, এর দায়ভার কার? আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসন এমন ব্যবস্থা নিতে হবে।"

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর রাতে ভুক্তভোগী দ্বীন মোহাম্মদ হৃদয় টিউশন শেষে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত রুমে গিয়ে উঠইলে রুমের দুই শিক্ষার্থী রোমান (বাংলা-১৮) ও ইউনুস (বাংলা-১৮) তাকে আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকেন। তারা বলেন, “হলে উঠার, হলে থাকার কিছু রুলস আছে। চাইলেই কেউ হলে উঠতে পারে না, হলে থাকতে হলে কষ্ট করতে হয়।” তিনি প্রতিবাদ করলে রোমান উচ্চৈঃস্বরে বলেন, “এই আস্তে কথা বলুন, আপনি এখনো হলে থাকেন না।” আর ইউনুস আঙুল তুলে বলেন, “প্রশাসন মুখ্য না, প্রশাসন চাইলেই কাউকে শিফট করতে পারে না।" সেই ঘটনার পর হল প্রশাসন বিষয়টি সমাধান করতে অভিযুক্তদের সিট বাতিল করে শাস্তি দিলেও পরবর্তীতে তিনি সেই শাস্তি প্রত্যাহার করেন।

হলে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের হাতে র‌্যাগিং-সদৃশ দুর্ব্যবহার, হুমকি এবং অপমানের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলেন এবং ফেসবুক পোস্টেও তা তুলে ধরেন।

ঐ পোস্ট দেওয়ার কারণে শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে তাওহিদুল ইসলাম জিসান (এমসিজে-১৬), ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম (একাউন্টিং-১৭) ও আকরাম (১৮তম আবর্তন) তার রুমে গিয়ে তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করে একটি ভিডিয়োবার্তা ফেসবুকে পোস্ট করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এতে তিনি মারাত্মক মানসিক চাপে পড়েন এবং বর্তমানে নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করছেন উল্লেখ করে। 

ভিডিয়ো বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম জিসান বলেন, "ওরা যে রুমে থাকে আমি ঠিক ওই রুমের উপরের তলায় থাকি। ওই রুমে যারা থাকেন তাদের সাথে সবসময় কথাবার্তা বলি। আমি আমার বড়ো ভাই হারিস ভাইয়ের কাছে গিয়েছি, সিনিয়র-জুনিয়র যে-রকম কথাবার্তা হয় সেরকম কথা বলছিলাম। এখানে উচ্চ গলায় কোনো কথা হয়নি৷ আমি কোনো রাজনীতি করিনা, কোনো দলেরও না।"

তার সাথে ওই রুমে অন্য কেউ ছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, "আমার সাথে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম ছিলেন। সে হয়ত ছাত্রদল করে, আমি এই বিষয়ে ক্লিয়ার না। ওর রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে, আমার রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই।"

হৃদয়ের সাথে এগ্রেসিভলি কথা কে বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি এখানে কোনো কথাই বলিনি, আমার যা কথা হয়েছে সব হারিসের সাথে।"

আরেক অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন বন্ধ করে রাখেন। 

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, 'যদি ছাত্রদলের কেউ এরকম কিছু করে থাকে, তা প্রমাণিত হয় তাহলে আমাদের দলীয় শৃঙ্খলা অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'