আসন্ন নির্বাচনে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’–এর আলামত দেখছেন হাসনাত আবদুল্লাহ
- ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৫১
আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আমলের মতো কারচুপির ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘একটা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে আবার আমরা যাচ্ছি৷ ২০২৪, ২০১৮ ও ২০১৪ সালের যে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে, আমরা চাই না এই বিতর্কিত নির্বাচনের আর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া চলছে, সেই প্রক্রিয়ায় আরেকটি প্রি–ইঞ্জিনিয়ার্ড একটি নির্বাচন আবার জাতি উপহার পাবে।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির এক সভায় এ কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং ঢাকা জেলা শাখা নিয়ে এ সভা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠন করে সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে রাজনৈতিক দলগুলো নানা মাত্রায় চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখন সচিবালয়ে বসে ডিসি ভাগাভাগি চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে। যেমন চট্টগ্রামের ডিসি আমি নেব, উত্তরবঙ্গের দুইটা ডিসি আমাকে ছাড়তে হবে; যদি রংপুরের ডিসি ছাড়ি, তাহলে আমাকে আরেক জায়গার ডিসি ছেড়ে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন: এনসিপির সমন্বয় সভা চলাকালে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
দলের নাম উল্লেখ না করে এনসিপি নেতা বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল তার নিয়ন্ত্রিত যে ব্যাংকগুলো দখল করেছে, যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দখল করেছে, সেই ব্যাংক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটা রাজনৈতিক দল স্কুল কমিটিগুলো ও এগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করেছে, শিক্ষকদের জিম্মি করেছে। আগামী নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করার জন্য তাঁদের এখনই সশস্ত্র কায়দায় ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করে হাসনাত বলেন, ‘এই কমিশন একটা স্পাইনলেস (মেরুদণ্ডহীন) কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে গনিমতের মাল হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো উপদেষ্টার কাছে গিয়ে বলে যে এই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন না, ওই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন; ওই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন না, সেই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই দুইটা দল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে গিয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আমরা আপনাকে এখানে এনেছি ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য, কিন্তু আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে, কতিপয় দলের কাছে নতজানু হয়ে তাদের ডিসি ভাগাভাগিতে আপনি সহায়তা করছেন। একটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা ভাগাভাগি, প্রশাসন ভাগাভাগি বন্ধ করতে হবে।’
সেনানিবাসে থাকা ‘এক ব্যক্তি’ও নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেন এনসিপির এই নেতা। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘তিনি ক্যান্টনমেন্টে বসে বসে ষড়যন্ত্র করছেন, কাকে নির্বাচনে জেতাবেন আর কাকে নির্বাচনে হারাবেন।’
এনসিপিকে দুর্বল না ভাবতে অন্য দলগুলোকে আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এনসিপিকে সংখ্যা দিয়ে মাপতে যাবেন না। আপনার লাখ লাখ নেতা-কর্মী রাস্তায় নেমে আসেনি। এই বড়াই আওয়ামী লীগকে দিতে শুনতাম। ছাত্রলীগ নাকি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন ছিল! এশিয়া মহাদেশে, শুধু বাংলাদেশের না! এখন টর্চলাইট দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। এক জায়গায় বলে ‘জয়’, আবার দুই মাইল দূরে গিয়ে বলে ‘বাংলা’। নিজেরা দৌড়ের ওপরে থাকে, ব্যানারটা নিয়ে দৌড়ের ওপরে থাকে। এসব লাখ লাখ নেতা-কর্মী কাজে আসেনি। ন্যায্যতার পক্ষে একজন মানুষ থাকলে সে যখন ঘুরে দাঁড়ায়, তখন সারা বাংলাদেশ তাকে সমর্থন দেয়।’
এনসিপির কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে নেতা-কর্মীদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে’ গা না ভাসানোর আহ্বানও জানান হাসনাত। তিনি বলেন, এনসিপিতে বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেকে গুপ্তচর হিসেবে ‘স্যাবোটাজ’ (অন্তর্ঘাত) করার জন্য এসেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় গা ভাসানোর আগে ‘ফ্যাক্ট চেক’ করতে হবে এবং নিজের সহযোদ্ধার ওপর আস্থা রাখতে হবে, বিপদে তাঁকে সমর্থন দিতে হবে, না হয় সংগঠন কখনোই বড় হবে না।
এনসিপির এ সভায় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।