ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন টপার তাহমিদ-অর্থ-প্রান্তী

২০২৪-২৫ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া তিন শিক্ষার্থী
২০২৪-২৫ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া তিন শিক্ষার্থী © টিডিসি সম্পাদিত

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা। এই স্বল্প সময়ে কীভাবে পড়ালেখা করলে সাফল্য পাওয়া যাবে, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে সেই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ২০২৪-২৫ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া তিন শিক্ষার্থী।

কম পড়লেও প্রতিটি মুহূর্তে মনোযোদ দিত তাহমিদ
কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে (বিজ্ঞান বিভাগ) ১ম স্থান অর্জনকারী কে এ এইচ এম তাহমিদ জানান, তার পড়াশোনায় কোনো নির্দিষ্ট রুটিন ছিল না। তিনি কম সময়ে পড়তেন, তবে প্রতিটি মুহূর্তই মনোযোগ দিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতেন।

তিনি বলেন, ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এবং কুরআন তেলওয়াতের পর পড়ার চেষ্টা করতাম। ডা. নাবিল স্যারের একটি লেকচারে শুনেছিলাম নামাজ বা কুরআন তেলাওয়াতের পর মস্তিষ্ক বেশি কার্যকরভাবে কাজ করে। তাই সেই সময়টাকে পড়াশোনার জন্য ব্যবহার করতাম। আমার মনে হয় এই রুলসটা আমার অনেক কাজে লেগেছে। আর সব সময় আল্লাহর কাছে দুয়া করতাম যে আল্লাহ আমি আমার সময়কে যেন যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমি জানতাম যে ঢাবি সব সময় মূল বইকে ফোকাস করে প্রশ্ন করে। আমি তাই পাঠ্যবইকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। গতানুগতিক নোটবই বা গাইড বই খুব বেশি না পড়ে, মূল বই ভালো করে পড়ার চেষ্টা করেছি। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বাছাই করেছি। পরবর্তীতে সেগুলো ভালোভাবে পড়েছি। এছাড়া যা পড়তাম তাই লেখার চেষ্টা করতাম। এটি লিখিত পরীক্ষায় খুব কাজে দিয়েছে বলে মনে করি। 

হতাশার সময় কীভাবে নিজেকে সামলে উঠতেন জানতে চাইলে তাহমিদ বলেন, পরীক্ষা খারাপ হলে হতাশ লাগত, কিন্তু আব্বু-আম্মু্র উৎসাহ ও আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আমাকে সাহস দিত। মন খারাপের সময় বেশি করে দোয়া করতাম এবং কুরআনের আয়াত আমাকে অনুপ্রেরণা দিত।

কোনো টপিক পড়ার আগে ভাবতাম ঢাবিতে এটা আসার সম্ভাবনা কত, যেটার সম্ভাবনা যেমন তার পিছনে ততটাই সময় দিতাম। অগুরুত্বপূর্ণ কোনো টপিকে সময় নষ্ট করতাম না একদমই। বিইউপিতে সাফল্য পাওয়ার পর একই প্রক্রিয়া ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছি।

অগুরুত্বপূর্ণ টপিকে সময় নষ্ট করত না আরাফাতুজ্জামান অর্থ
একই ইউনিটে বিজ্ঞান থেকে ১০ম স্থান অর্জনকারী মো. আরাফাতুজ্জামান অর্থ জানান, তিনি কখনো দীর্ঘ সময় একটানা পড়াশোনা করতেন না। বরং যা পড়তেন, তা মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেন। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন করে রাখার অভ্যাস এবং প্রশ্ন বিশ্লেষণের ওপর জোর দিয়েছিলেন শুরু থেকেই।

তিনি বলেন, কোনো টপিক পড়ার আগে ভাবতাম ঢাবিতে এটা আসার সম্ভাবনা কত, যেটার সম্ভাবনা যেমন তার পিছনে ততটাই সময় দিতাম। অগুরুত্বপূর্ণ কোনো টপিকে সময় নষ্ট করতাম না একদমই। এ প্রক্রিয়াতেই বিইউপির এফএসএসএসের ভর্তি পরীক্ষায় ৬৮তম স্থান অর্জন করি। বিইউপিতে সাফল্য পাওয়ার পর একই প্রক্রিয়া ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছি।

ততক্ষণই পড়তাম, যতক্ষণ না নিজে সন্তুষ্ট হই: প্রান্তী পাল
মানবিক বিভাগ থেকে একই ইউনিটে ২৩তম হওয়া প্রান্তী পাল অমি জানান, তিনি ভর্তি প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলেন। গৃহশিক্ষকের সহায়তায় মূল সিলেবাস একবার শেষ করে ভর্তি কোচিংয়ে যোগ দেন। তিনি বলেন, আমি ভর্তি প্রস্তুতির সময়ে কিছু ট্রিক ব্যবহার করতাম। আমি কখনো কিছু স্কিপ করে পড়তে পছন্দ করতাম না। আমি প্রতিটা টপিক ভীষণ সুক্ষ্মভাবে পড়তে চেষ্টা করতাম। সেই টপিকটি আয়ত্তে আসার পর সেখানে যে সমস্যাগুলো সম্মুখীন হতাম, সেগুলো দাগিয়ে পড়তাম। শেষে যেন সেগুলো দেখে নিতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমি ততক্ষণই পড়তে চেষ্টা করতাম যতক্ষণ না আমি নিজে সন্তুষ্ট হই। আমি ভর্তি প্রস্তুতির সময়ে প্রচুর বই কিনেছি। কোনো টপিক যেখানে সহজ এবং বিস্তারিত আকারে পেয়েছি, সেখান থেকেই পড়েছি। এভাবেই আসলে আমি নিজেকে প্রস্তুত করেছি।

কোনো শিক্ষার্থী যতই নিজেকে প্রস্তুত করুক না কেন, হতাশা ভর করবেই। আমিও অনেক সময় হতাশ হয়েছি, কান্না করেছি আর ভেবেছি হয়তো কোথাও চান্স পাব না। কিন্তু তখনি আমার মনে পড়েছে আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা।

হতাশার মুহূর্তে কীভাবে নিজের মনোবল ধরে রেখেছিলেন জানাতে গিয়ে প্রান্তী বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যতই নিজেকে প্রস্তুত করুক না কেন, হতাশা ভর করবেই। আমিও অনেক সময় হতাশ হয়েছি, কান্না করেছি আর ভেবেছি হয়তো কোথাও চান্স পাব না। কিন্তু তখনি আমার মনে পড়েছে আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা। বাবা ব্যবসাসূত্রে নেত্রকোনা থাকেন। বাবা যখন বাসায় আসতেন, তখন ওনার পরিশ্রান্ত চেহারাই ছিল আমার অনুপ্রেরণা। বারবার নিজেকে বুঝিয়েছি আর খুব বেশি খারাপ লাগলে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছি, কান্না করেছি। তিনিই আমার মন ভালো করেছেন।