বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
খণ্ডকালীন শিক্ষকের শীর্ষে থাকা ১৫টির মধ্যে ১০টিতেই মানা হয়নি আইন
- টিডিসি রিপোর্ট
- ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১৫
দেশে অনুমোদিত ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১০৩টি। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৭ হাজার ৪৭৯ জন। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক রয়েছেন ১৩ হাজার ১৬৯ জন। আর খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৩১০ জন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক পূর্ণকালীন শিক্ষকের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বা তার কম থাকার বিধান থাকলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ‘৫০তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৩’-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষণা, ব্যয়, প্রকাশনা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় বর্তমানে ১ হাজার ১৫৬ জন পূর্ণকালীন এবং ৩০৫ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ধারা ৩৫(৩)-এ বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের প্রায় ৭৫ শতাংশ পূর্ণকালীন এবং ২৫ শতাংশ খণ্ডকালীন। পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে প্রফেসর ৯৫২, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ১ হাজার ১১৯, অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর ৩ হাজার ৪১০, লেকচারার ৭ হাজার ৪৭৮ ও অন্যান্য ২১০ জন রয়েছেন। আর খণ্ডকালীন শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন প্রফেসর ১ হাজার ৭, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ৫৯৯, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ৬৯৮, লেকচারার ১ হাজার ৬৫০ ও অন্যান্য ৩৫৬ জন।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ধারা ৩৫(৩)-এ বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। ইউজিসির প্রতিবেদন বলছে, এ নীতি অনুযায়ী বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকের তুলনায় খণ্ডকালীন শিক্ষক-এর সংখ্যা বেশি, যা আইন অনুযায়ী সন্তোষজনক নয়।
ইউজিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৮১ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়ে এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানটিতে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক ৬৩৮ জন। হিসাব বলছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ২১৩ জনের বেশি হওয়া যাবে না, কিন্তু এখানে রয়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি। একই ভাবে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৩০৪ জন, যেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যা ২৫৪। এ ছাড়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে মোট ১ হাজার ৬১ জন শিক্ষকের বিপরীতে খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ২৩৮ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পূর্ণকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৮২৩ জন। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করা হয়েছে।
খণ্ডকালীন শিক্ষকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপক পূর্ণকালীন অধ্যাপকের তুলনায় বেশি। যেমন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮ জন পূর্ণকালীণ অধ্যাপকের বিপরীতে খণ্ডকালীন অধ্যাপক রয়েছেন ৯৮ জন। ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ২৫ জন পূর্ণকালীন অধ্যাপকের বিপরীতে এ সংখ্যা ১১০টি। একইভাবে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ২৯ জন পূর্ণকালীন অধ্যাপকের বিপরীতে ৮৬ জন খণ্ডকালীন, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ১৮ জন পূর্ণকালীন অধ্যাপকের বিপরীতে ৬১ জন খণ্ডকালীন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ২ জন পূর্ণকালীন অধ্যাপকের বিপরীতে ১৪ জন খণ্ডকালীন অধ্যাপক রয়েছেন।
খণ্ডকালীন শিক্ষকের তালিকায় শীর্ষে থাকা ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা নিচে দেওয়া হল। এক্ষেত্রে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যার পাশাপাশি ব্রাকেটে মোট শিক্ষকের সংখ্যা এবং মোট শিক্ষকের তুলনায় খণ্ডকালীন শিক্ষকের শতকরা হার তুলে ধরা হল।
১. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি - ৪৮১ (মোট শিক্ষক ১১১৯, হার ৪২.৯৫%)
২. ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ - ৩০৪ (মোট শিক্ষক ৫৫৮, হার ৫৪.৪৬%)
৩. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি - ২৩৮ (মোট শিক্ষক ১০৬১, হার ২২.৪৩%)
৪. সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি - ১৯৯ (মোট শিক্ষক ৪৪৬, হার ৪৫%)
৫. ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি - ১৯২ (মোট শিক্ষক ৫১৭, হার ৩৭.১৪%)
৬. প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি - ১৭৮ (মোট শিক্ষক ২৩৯, হার ৭৪.৪৪%)
৭. নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি - ১৭৪ (মোট শিক্ষক ৬৪১, হার ২৭.১৩%)
৮. ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) - ১৬৩ (মোট শিক্ষক ৩৮৯, হার ৪২%)
৯. ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক - ১২৬ (মোট শিক্ষক ৩৩২, হার ৩৮%)
১০. আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) - ১২০ (মোট শিক্ষক ৪৮৫, হার ২৫%)
১১. বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা (বিএআইআইইউএসটি) - ১১৩ (মোট শিক্ষক ১২০, হার ৯৪.১৬%)
১২. ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি - ১০৮ (মোট শিক্ষক ৩৫০, হার ৩১%)
১৩. নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খুলনা - ১১৫ (মোট শিক্ষক ১৭৯, হার ৬৪.২৫%)
১৪. নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ - ১০২ (মোট শিক্ষক ৩৩৯, হার ৩০%)
১৫. আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি - ৯৮ (মোট শিক্ষক ৫৩৮, হার ১৮.২১%)
আইন মেনে খণ্ডকালীন শিক্ষকের শীর্ষে যে ৫ বিশ্ববিদ্যালয়
তালিকায় থাকা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি), নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকের তুলনায় খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে এক-তৃতীয়াংশের কম।