জোবায়েদের সাথে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক ছিল : পুলিশ

মাহির ও তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ বামে জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদে
মাহির ও তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ বামে জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদে © টিডিসি সম্পাদিত

বর্ষার ও মাহিরের সম্মিলিত পরিকল্পনায় খুন করা হয় জোবায়েদকে। জোবায়েদকে মাহির বাসার নিচ থেকে আঘাত করা শুরু করে মাহির ও তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ আয়লান। এসময় জোবায়েদের খুনের সময় উপস্থিত ছিলো বর্ষা। পুলিশের বক্তব্য মাহিরের পাশাপাশি জোবায়েদের সঙ্গে প্রেম ছিল বর্ষার। সেই জেরেই সম্পর্কের এ পর্যায়ে খুন করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্রকে। 

আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপির) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ডিসি মল্লিক আহসান।

তিনি বলেন, মাহির রহমানের সাথে বার্জিস শাবনাম বর্ষার দেড় বছর যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভিকটিম মো. জোবায়েদ হোসেন বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে প্রায় এক বছর ধরে বাসায় গিয়ে পড়াতেন এবং একপর্যায়ে উভয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। ঘটনার একমাস পূর্বে মাহির জানতে পারে জোবায়েদ এর সাথে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাহির মেনে নিতে পারে না এবং এর সূত্র ধরে মাহির ও বর্ষার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে বর্ষা মাহিরকে জোবায়েদকে হত্যা করার প্ররোচনা দেয় এবং তারা জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করে। জোবায়েদ বাসায় কখন পড়াতে আসে এবং কখন চলে যায় নিয়মিত বর্ষা মাহিরকে জানায়। মাহির তার বন্ধু আয়লান এর সাথে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি জানায় এবং তারা দুজন আগানগর বউ বাজার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকায় হতে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কিনে ।

আরও পড়ুন: ‘তুমি না মরলে মাহিরের হতে পারব না’-জোবায়ের বাঁচার চেষ্টা করলে বলে ছাত্রী

ডিসি বলেন, ঘটনার দিন রবিবার ১৯ অক্টোবর বিকাল অনুমান ০৪:৩০ ঘটিকায় জোবায়েদ বংশাল থানাধীন ৩১নং ওয়ার্ডস্থ নুর বক্স লেন এর ১৫নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় টিউশনি করাতে গিয়ে বাসার নিচতলার সিঁড়ির নিচে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা বার্জিস শাবনাম বর্ষার সাবেক প্রেমিক মোঃ মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান বাসার নিচে জোবায়েদ পৌঁছালে মাহির জোবায়েদকে বর্ষার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে এবং একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে মাহিরের ব্যাগে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু বের করে জোবায়েদের গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার সময় বর্ষা তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল।

পুলিশ জানায়, বর্ষার সাথে মাহিরের ৯ বছরের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু মাঝে আবার বর্ষা জোবায়েদের উপর দূর্বল হয়ে পড়ে। এসময় বর্ষা মাহিরকে না করে দেয়। এবং সে জোবায়েদেকে পছন্দ করে বলে জানায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার বয়ফ্রেন্ড মাহিরকে জানায় যে জোবায়েদকে আর ভালো লাগে না। তখন জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বর্ষা ও মাহির। জোবায়েদের সাথে মাঝে তিন মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বর্ষার। কিন্তু পরবর্তীতে জোবায়েদের থেকে সরে আসতে চায় বর্ষা। জোবায়েদের সাথে এই  তিন মাসের রিলেশন থাকা সময়েও বর্ষা মাহিরকে নিজের গহনা বেচে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাইক কিনে দেন। 

ডিসি বলেন, এদিন বিকালে জীবন বাচাতে জোবায়েদ নিচে থেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। তিন তলায় উঠার পরে সে আর হাটতে পারে না। এসময় সিড়িতে জোবায়েদের সাথে বর্ষার দেখা হয়। বর্ষাকে জোবায়েদকে বলে আমাকে বাচাও। কিন্তু বর্ষা বলে, তোমাকে না মারলে আমি মাহিরের হবো না। এসময় জোবায়েদের গলার ডান পাশে সুইচ গিয়ার দিয়ে আঘাত করে মাহির। ছুরি মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাহির তার বন্ধু আইলানকে ছুরি তুলে আনতে বলে। 

ডিসি বলেন, এঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং মাহিরের একজন বন্ধুকে প্রিতমকে আমরা সাক্ষী হিসেবে রেখেছি। মাহির খুন করে প্রিতমের কাছে স্বীকার করে। এবং রক্ত ক্ষত নিয়ে তার বন্ধুর বাসায় যায়।

আরও পড়ুন: মিন্নির মতো ত্রিভুজ প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ

জোবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯- ২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সাথে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে জোবায়েদ হোসাইন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ১৫,নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রী ও বায়োলজি পড়াতেন। ওই ছাত্রী বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন। রোববার  আনুমানিক বিকাল ৪ টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় উঠতে সিড়িতে তিনি খুন হন। বাসার নিচ তলার সিড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিড়িতে রক্ত পড়েছিলো। তিন তলার সিড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে। রবিবার রাত ১১ টার দিকে ওই ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়। এদিন রাত ১১ টার সময় আরমানিটোলার নূরবক্স রোড়ের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ প্রটোকলে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। গতকাল জোবায়েদকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। 

এ ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৯) ও তার প্রেমিক মো. মাহির রহমান (১৯) ও ফারদিন আহমেদ আয়লানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে, এদিন সকালে বংশাল থানায় এ মামলা দায়ের করে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। এঘটনায় তিনজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মামলার বাদী মামলার বাদি এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন,  মামলায় যারা প্রকৃত আসামি আমরা তাদের নাম উল্লেখ করেই মামলা করেছি। আমরা চাই কোন নির্দোষ ব্যক্তি যেন ফেসে না যায় যারা প্রকৃত অপরাধী তারাই শাস্তি পাক। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করেছি তাদের সকলকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সুষ্ঠ বিচার চাই।