চারদিকে অনৈক্যের সুর, হতাশ হচ্ছি: মির্জা ফখরুল
- ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১১
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে অভ্যুত্থানের পরে দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন দেখছি আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা চারদিকে দেখছি একটা অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মুক্তিযোদ্ধা হলে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে, ট্রানজিশনাল পিরিয়ড চলছে। খুব অস্থিরতা আছে। এই অস্থিরতাকে…এখানে তো সব জেনজি। ওদের চিন্তা, ওদের ভাবনা, আমাদের চিন্তা, আমাদের ভাবনা থেকে আকাশ পাতাল তফাত। কারণ বয়স। প্রজন্মের যে পার্থক্য এটা অস্বীকার করার তো উপায় নাই।
তিনি বলেন, হীরা আপা (বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা) যখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে সমুদ্র ভ্রমণে গেছেন, তাকে সমুদ্র সম্পর্কে জানানো হয়েছে। কিন্তু তখনকার সময় আর এখনকার সময় তো এক নয়। এখন ওরা ছোট্ট এই সেটের (মোবাইল) মধ্যে গোটা পৃথিবীকে পেয়ে যায়। ওদের অনেকেই আমাদের চেয়ে বেশি জানে। এ কথাটা আমাদের বুঝতে হবে। কিন্তু এই জানাটা, আর এটাকে ব্যবহার সুনির্দিষ্ট মঙ্গলখাতে করতে হবে। মঙ্গলের জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়। আজকে গোটা পৃথিবীতে চলছে অস্থিরতা। সব মিলিয়ে আমরা যদি মানব কল্যাণে কাজ করি, আমরা যদি সুন্দর পৃথিবী তৈরির জন্য কাজ করি, তাহলেই আমরা দেশটাকে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিজেকে তৈরি করতে হবে পৃথিবীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে। পৃথিবীটা এখন প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে। যদি তুমি টিকতে না পার, তুমি নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে। তার জন্য তোমাকে তৈরি হতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা সেরকম তো নয়ই, অত্যন্ত নিম্নমানের। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই। এর জন্য দায়ী আমরাই। এরই জন্য দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র। এখানে শিক্ষার ওপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নাই, তার জন্য কোনো ইনস্টিটিউট নাই, ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নাই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ পাস তৈরি করছি।
নিজের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনীতিতে আমার বয়স প্রায় ৩৭ বছর। রাজনীতিতে আসার কারণ আমার দুটো। একটা হচ্ছে, পারিবারিকভাবে আমাদের একটা কম্পারশন আছে রাজনীতিতে আসার। দ্বিতীয়ত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত উঁচু দরের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে পরিচিত হবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তখন যে ছাত্র রাজনীতি ছিল, সে ছাত্র রাজনীতিতে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্ররা বিচরণ করত। তাদের নাম বললে এখন তোমরা হয়তো চিনবে না, চেনার কথা না। কিন্তু তখন তারা রাজনীতিকে ডমিনেট করত ইনটেলেকচুয়াল অ্যাপ্রোসে।
তিনি বলেন, আমি আজকে প্রাণ দিয়ে অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চাই আমার সেই সমস্ত ছাত্র/ছাত্রী ভাই-বোনদের, সন্তানদের, যারা এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রাণ দিয়েছে। আমি আজকে আরও একজন মহান মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করে আমাদের একটা নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর খুব অল্প সময়, সাড়ে তিন/চার বছরের মধ্যে এই মানুষটি আমাদের দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। নতুন একটা পথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আজকে যে গার্মেন্টস, যে উন্নয়ন তোমরা দেখছ, আজকে যে রেমিট্যান্স আসছে, আজকে যে কৃষির উন্নয়ন তোমরা দেখছ- এই সব কিছুর শুরু কিন্তু ওই মানুষটির হাত দিয়ে।
ফখরুল বলেন, আজকে এই কথা এ জন্যই বললাম, আজকে তোমরা একেবারেই তরুণ। এসএসসি পাস করে এখন কলেজে যাবে। আরেকটা নতুন জীবনে যাবে। তোমাদের সামনে এখন বিশাল পৃথিবী। তোমাদের সামনে এখন একটা সম্ভাবনাময় স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবার একটা সুযোগ।
তিনি বলেন, বারাক ওবামা যখন রাজনীতি নামলেন, তখন তার বন্ধুরা, আত্মীয় স্বজনরা তাকে ফোন করে বলল যে, তুমি ওই নোংরা প্রফেশনে যাচ্ছ কেন? হোয়াই আর ইউ গোইং টু ইন দ্য ডার্টি প্রফেশন? তো উনি বললেন, এই ডাস্ট থেকেই তো আমি ফুল তৈরি করতে চাই। আমি যখন রাজনীতি নামি তখন আমাকে অনেকেই বারাক ওবামার মতো বলেছিল।
ফখরুল বলেন, রাজনীতির মধ্যেই যদি সৌন্দর্য না আনা যায়, রাজনীতির মধ্যে যদি সততা না আনা যায়, রাজনীতির মধ্যেই যদি স্বপ্ন পূরণ করবার, লক্ষ্যে দৌড় দেয়ার যে ইচ্ছা, সেটা যদি তৈরি না করা যায়, তাহলে তো রাজনীতি কখনো সুন্দর হবে না। আর যদি রাজনীতি হয়…আমরা গতবার দেখলাম যে পালিয়ে যেতে হল জনগণের কাছ থেকে, দেশ ছেড়ে, তখনই সেটা ডার্টি প্রফেশন হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমি তোমাদেরকে এসব কথা বলে ভারাক্রান্ত করতে চাই না। আমি তোমাদের সামনে একটা সুন্দর স্বপ্ন তৈরি হওয়া দেখতে চাই। আমি তোমাদের সামনে একটা নতুন সূর্য উঠুক দিগন্তে, সেই সম্ভাবনা দেখতে চাই। এই বিষয়গুলো কিন্তু সব সময় মনে রাখতে হবে। তোমাদের বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য জীবনটা অনেক সুন্দর। জীবনটা অনেক স্বপ্নময়, স্বপ্নময় রাখতে হবে। স্বপ্ন সব সময় দেখতে হবে। ওই যে কথা মার্টিন লুথার কিং বলে গিয়েছিলেন আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম। এই স্বপ্ন ছাড়া তুমি কোথাও পৌঁছাতে পারবে না। ড্রিম ছাড়া তুমি যেতে পারবে না। ইউ মাস্ট হ্যাভ দ্য ড্রিম, এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাব সভাপতি প্রফেসর ডা. সরকার মাহবুব আলম, মোশাররফ হোসেন পুস্তি, মো. মফিজুর রহমান প্রমুখ।